বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

নামকাওয়াস্তে প্রশিক্ষণ গচ্চা বিপুল টাকা

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৫৭ জনের মধ্যে পদায়ন ৭২

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

পাঠান সোহাগ
দক্ষ চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও টেকনিশিয়ানের অভাবে সম্পূর্ণরূপে চালু করা যাচ্ছে না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৫ ধাপে চিকিৎসক, কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও টেকনিশিয়ানসহ মোট ১৫৭ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পের টাকায়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে ৭২ জনকে পদায়ন করলেও কাজে যোগদান করেছে মাত্র কয়েকজন। প্রশিক্ষণার্থীরাই বলেছেন, 'এটি প্রশিক্ষণ হয়নি হয়েছে বিদেশভ্রমণ।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৫২ জন চিকিৎসক, ১২ জন কর্মকর্তা, ৫৩ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ২৩ জন টেকনিশিয়ানসহ মোট ১৫৭ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসক, ৫ জন কর্মকর্তা, ৫০ সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ১১ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ানকে পদায়ন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ৭২ জনকে পদায়ন দেখালেও বেশিরভাগই বিএসএমএমইউতে কর্মরত আছেন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেড় মাস মেয়াদি এ প্রশিক্ষণ সিনিয়র স্টাফ নার্স ও টেকনিশিয়ানদের কোনো কাজেই আসেনি। প্রশিক্ষণের নাম করে বিদেশ ঘুরে এসেছে তারা। যেসব মেশিন ও হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট দেখে এসেছে, এসব কাজে তারা আগে থেকে অভ্যস্ত। অ্যাডভান্স লেভেলে কোনোকিছুই শিখতে পারেনি। এতে দেখা গেছে, বিদেশ গিয়ে তারা প্রশিক্ষণের আগ্রহ হারিয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, 'দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণে গিয়ে দুই দেশের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মীরা নলেজ শেয়ার করেছে। ওই দেশের হাসপাতালে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জেনেছে। পাশাপাশি ওই দেশের কর্মীরা বাংলাদেশের হাসপাতাল, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থ্য সম্পর্কে জেনেছে। দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে ৪৫ দিন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন রেডিওলজি বিভাগের রেডিওগ্রাফার রফিকুল ইসলাম। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, 'এই অল্প সময়ে কি কোনো কিছু শেখা যায়। আর আমরা যে ধরনের মেশিন চালাই, ঠিক ওই ধরনের মেশিনে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এতে শেখার কোনো আগ্রহ ছিল না। আমরা ভ্রমণ করতে গেছি, ভ্রমণ করে এসেছি। আমাদের মধ্যে কাউকেই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দেওয়া হয়নি। পদায়ন দেখালেও পদায়ন হয়নি।' দক্ষিণ কোরিয়া ফেরত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যনীতি আর দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্যনীতি ভিন্ন। সেই দেশ থেকে শেখার আছে অনেক, কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োগের জায়গা খুবই কম। আমরা সেখানে যা দেখে এসেছি তা এ হাসপাতালে প্রয়োগ করতে হলে দুই থেকে আড়াই হাজার দক্ষ জনবল দরকার। আমাদের আছে মাত্র সাড়ে তিনশ। আমরা অল্প অল্প করে চিকিৎসাসেবা চালু করছি। দক্ষ জনবল পেলে সম্পূর্ণরূপে চালু হবে সুপার স্পেশালাইজড। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কোরিয়া থেকে যেসব যন্ত্রপাতি মেশিন আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই পুরনো মডেলের। দুই থেকে আড়াই বছর আগে আনা এসব মেশিন স্থাপন করা হলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের ঘাটতির কারণে চালু করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে মেশিন ব্যবহার না করলে মেশিনে কর্মদক্ষতা নষ্ট হচ্ছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, 'এখানে প্রত্যেক রোগীর একটা ইউনিক আইডি থাকবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশনসহ সবকিছুই থাকবে সফটওয়্যার নির্ভর হবে। আমাদের মেশিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার আছে। এ ছাড়া সেসব কোম্পানি থেকে মেশিন নেওয়া হয়েছে। তারাও খোঁজখবর রাখেন।' এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিএসএমএমইউর জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কাল আসেন। তাহলে আরও জানতে পারেন। আমি এর চেয়ে বেশি বলতে পারব না।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেজিস্ট্রার ও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল হান্নান যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমি আজই (গতকাল রোববার) দায়িত্ব পেলাম, আগে বুঝে নেই। তারপর সেটা দেখে-শুনে বলতে হবে। এ হাসপাতাল আগে যে রকম ছিল এখনো সেরকমই আছে। এই অল্প সময়ে পরিবর্তন হওয়ার কোনো কিছু নেই।' সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে রোগী দেখছেন। মোট ১৪ বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক বা কনসালট্যান্ট চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৩ তলাবিশিষ্ট ৭৫০ শয্যার এ হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। জরুরি বিভাগে রয়েছে ১০০ শয্যা। রয়েছে ভিভিআইপি, ভিআইপি কেবিন। ডিলাক্স শয্যা ২৫টি। অত্যাধুনিক সব ডায়াগনস্টিক সুবিধাও রাখা হয়েছে। রয়েছে পাঁচটি স্পেশালাইজড সেন্টার। জরুরি বিভাগ, কার্ডিয়াক সেন্টার, লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন ইউনিট এবং মা ও শিশু ইউনিট। রয়েছে সর্বাধুনিক রোবোটিক সার্জারি ব্যবস্থা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ১৪ বিভাগে রোস্টার অনুসারে রোগী দেখেন। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকরা প্রতিদিন বসেন। সকালের শিফটে যারা বসেন তারা নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসেবে কাজ করেন। আর বিকালের শিফটে যারা কাজ করেন তাদের রোগীর কাছ থেকে নেওয়া ভ্যাটসহ কনসালট্যান্সি ফির ৬০ শতাংশ দেওয়া হয়।