শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

অবৈধ যানবাহনের দখলে বাবুবাজার সেতু

ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে ভোগান্তি
মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
  ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০
অবৈধ যানবাহনের দখলে বাবুবাজার সেতু

রাজধানী ঢাকার গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু। এ সেতুর নয়াবাজার থেকে বাবুবাজার ও কেরানীগঞ্জের আগানগর সিঁড়ি এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ যানবাহনের স্ট্যান্ড ও ভ্রাম্যমাণ দোকান। অবৈধ এসব লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানের কারণে দিনভর এই সেতুর ওপর যানজট লেগে থাকছে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের। তাদের অভিযোগ, এই অনিয়ম যাদের দমন করার কথা তাদের পাহারায় গড়ে উঠেছে বাবুবাজারের এই অবৈধ বাস-ভ্যানের স্ট্যান্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে নির্মাণ করা হয় বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু। আর দ্বিতীয় সেতু চালু হয় ২০০১ সালে। দ্বিতীয় সেতুটিকে ২০১৩ সালে টোলমুক্ত করার ফলে এই সেতু দিয়ে অধিক পরিমাণ যানবাহন পার হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু সেতুর ওপর অবৈধ স্ট্যান্ড, নয়াবাজার প্রান্তে রাস্তায় অবৈধ পার্কিং, কেরানীগঞ্জের কদমতলি থেকে সেতুর প্রবেশমুখে স্ট্যান্ড, নয়াবাজার থেকে তাঁতিবাজার সড়কের অর্ধেকজুড়ে পিকআপ স্ট্যান্ড গড়ে উঠায় বেড়েছে যানজট।

এ ছাড়া দুপুর থেকেই সেতুর ওপর বসতে শুরু করে হরেকরকমের দোকান। এসব দোকানে ভিড় জমান আগ্রহী ক্রেতারা। ফলে সৃষ্টি হয় জনসমাগম। একদিকে গাড়ির চাপ, অন্যদিকে অবৈধ এসব দোকানের সমারহে দিনকে দিন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে বাবুবাজার সেতু। দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের চোখের সামনেই এসব অনিয়ম হচ্ছে বলে পথচারী মোস্তাকিম হাসানের অভিযোগ। মাঝেমধ্যেই যানজট ছাড়িয়ে যায় বহুদূর অবধি। কখন কারা ছোটাবে অবৈধ বাসস্ট্যান্ডের জট তা জানে না সাধারণ যাত্রীরা। নিরুপায় হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাদের। সরেজমিন গিয়ে ঘুরে বাবুবাজার সেতুর জট ভোগান্তির এ চিত্র দেখা যায়।

আরেক পথচারী চিকিৎসক ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, বাবুবাজার সেতুর মাজারের ডিভাইডার ভেঙে কদমতলি থেকে আসা ব্যাটারিচালিত ভ্যান, অটোরিকশা বাবুবাজারের দিকে চলে আসে রং-সাইটে। এসব কারণে র্দীর্ঘদিন ধরে বাবুবাজার সেতুর ওঠা-নামার জায়গায় যানজট লেগেই থাকে। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

এদিকে ব্যাটারিচালিত ভ্যান-রিকশার রাজত্বে যেন উল্টো পথে চলাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভ্যান চালক মঈন উদ্দিন জানান, এভাবে উল্টো পথে না এলে, সেতুর শেষ মাথায় যেখানে ডিভাইডার শেষ, সেখান থেকে ঘুরে আসতে হবে তাদের। তাতে কম করে হলেও আধাঘণ্টার ভোগান্তি। আর সিঁড়ির এই গোড়াতেই যাত্রী বেশি পাওয়া যায়।

নয়াবাজার চাল ব্যবসায়ী হারুন মোলস্না বলেন, 'রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ সব সময় থাকে না, ফলে চালকরা নিয়ম না মেনে গাড়ি চালান। কোনো কোনো সময় এমনও হয়, যানজটের কারণে হাঁটার রাস্তা থাকে না। এসবের যেন দেখার কেউ নেই!'

আহমেদ বাওয়ানী বিদ্যালয়ের অভিভাবক বুলবুল আহমেদ বলেন, 'বাবুবাজারের এই যানজটের কারণে বাচ্চাদের সঠিক সময়ে স্কুলে নিয়ে যেতে পারি না। হেঁটে যে আসব, তখন রাস্তা পার হওয়া আরও দুঃসহ। যেভাবে চলছে তাতে মনে হচ্ছে এখানে সব অনিয়মই নিয়ম!'

বাবুবাজার সেতু এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, 'উল্টো পথে গাড়ি আসলে আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করি গাড়িগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার। এরপরও অনেক গাড়ি চলে আসে। সেতুর কদমতলি পয়েন্টের ট্রাফিক পুলিশরা যদি ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়, তাহলে আর গাড়িগুলো আসতে পারে না। এ বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগকে আরও সচেতন হতে হবে।'

তবে উল্টো পথে গাড়ি চলাচলের বিষয়টি স্বীকার করেন কদমতলি গোলচত্বর এলাকায় দায়িত্বরত ঢাকা দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্য ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এটি বন্ধে কাজ চলছে।'

ট্রাফিকের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, 'বাবুবাজার সেতুর যানজট মানুষের নিয়মিত সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর জন্য অনেক কিছুই দায়ী। বাবুবাজার সেতুটির দুই পাশে ওঠা-নামার জন্য সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে। এই সিঁড়ির জন্য শত শত মানুষ সেতুটিতে উঠে পারাপারের জন্য যাত্রীবাহী পরিবহণ থামায়। এতে করে সেতুটিতে যানজট লেগেই থাকে। সেতুর ওপর গাড়ি থামানোর দায়ে মাঝেমধ্যেই ট্রাফিক আইনি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তবে পরিবহণের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারলেও মানুষকে তো আর আটকানো যায় না।'

এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ডিএমপির (ট্রাফিক দক্ষিণ) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে