শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক অবরুদ্ধ, দুই ছাত্রলীগ নেতার কারাদন্ড

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
  ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক অবরুদ্ধ, দুই ছাত্রলীগ নেতার কারাদন্ড

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি না মানার অপরাধে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই অপরাধে উয়ার্শী ইউপির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মলিস্নক হুরমহলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান এ দন্ডাদেশ দেন।

কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুলস্নাহ আল ফাহাদ এবং উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মলিস্নক নিশাত।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের সাফর্ত গ্রামের হালিম খান গজনবীর বাড়িতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এসএম মুজাহিদুল ইসলাম মনির (কাপ পিরিচ), ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শওকত হোসেন (টিউবওয়েল) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহবুবা শাহরীনের (কলস) উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে উপস্থিত সবার মাঝে পিকআপ থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছিল।

এ খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান ওই বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালান। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মলিস্নক হুরমহল ও ছাত্রলীগ নেতারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের সঙ্গে তর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে বিচারকের সঙ্গে থাকা আনসার সদস্যদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় নেতাকর্মীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারককেও ধাক্কা দেন। ধাক্কাধাক্কিতে আশিকুর ও সোহেল নামে দুই আনসার সদস্যের প্যান্ট ছিঁড়ে যায় এবং তারা আহত হন। এ ঘটনায় আনসার সদস্য আশিকুরের পরিচয়পত্রও খোয়া যায়।

এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের নির্দেশনা না মেনে ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মলিস্নক হুরমহল, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুলস্নাহ আল ফাহাদ ও উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মলিস্নক নিশাত উঠান বৈঠকে আসা কর্মী-সমর্থকদের মাঝে খাবারের প্যাকেট বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত এবং বিচারককে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলমকে অবহিত করেন এবং সহযোগিতা চান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম বিষয়টি জানতে পেরে রাত সোয়া ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের দুই নেতা ও ওই বাড়ির মালিককে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মলিস্নক হুরমহলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুলস্নাহ আল ফাহাদ ও উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মলিস্নক নিশাতকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন।

এ খবর পেয়ে উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে থাকেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বর ত্যাগ করলে একটার দিকে কারাদন্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে টাঙ্গাইল কারাগারে পাঠানো হয়।

মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. করিম জানান, কারাদন্ডাদেশপ্রাপ্তদের রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. মাসুদুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬ ৩২(১) ধারায় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং একই ধারায় দু'জনকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে