বিএনপি আজীবন টিকে থাকবে :মির্জা আব্বাস

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর নয়া পল্টনে শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে 'গণদোয়া' কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস -সংগৃহীত
দুর্নীতি-লুটপাট করে সরকার দেশকে 'তলাবিহীন' করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। শুক্রবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে 'গণদোয়া' কর্মসূচির আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'সংক্ষিপ্ত রাষ্ট্র পরিচালনার ইতিহাস শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাত্র সাড়ে তিন বছর। এই সাড়ে তিন বছরে উনি বাংলাদেশকে যা দিয়ে গেছেন- তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে যেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশকে, সেই বাংলাদেশকে আবারো তলাবিহীন করে ফেলেছে এই সরকার।' মির্জা আব্বাস বলেন, 'এই বাংলাদেশ এত দুরাবস্থা কেন? এই দেশে আজকে লুটেরাদের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। আমরা আগে শুনতাম বর্গিরা দেশে আসত, লুট করে চলে যেত। এখন বর্গিরাই ক্ষমতায় বসে গেছে, তারা লুট করে চলে যায় না, তারা লুট করে সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করে দেয়। সেই বর্গিরা ক্ষমতায় আছে এখন।' জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই গণদোয়া কর্মসূচিতে মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজা। মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ডসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দোয়ায় অংশ নেন। মির্জা আব্বাস বলেন, 'আজকে এতদিন পরেও যারা একসময় বলেছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নাই, বিএনপিও নাই। যারা ভাবে, বিএনপি থাকবে না, তাদের মুখে ছাই দিয়ে বিএনপি আলস্নাহর রহমতে টিকে আছে এবং বিএনপি টিকে থাকবে আজীবন।' জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, 'পত্রিকায় দেখলাম ঘুম থেকে উঠেই, এক লিটারে জ্বালানি তেলের দাম আড়াই টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে- বুঝতে পারছেন। এক লিটার তেলের দাম যদি আড়াই টাকা বাড়ায় এমনিতে তো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আর আড়াই টাকা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অর্থ হল সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া। কত জিনিস আছে- বিদু্যৎ-তেল এগুলোর দাম বাড়লে প্রতিটা জায়গায় এর অ্যাফেক্ট পড়ে।' ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন। জিয়াউর রহমানের সততা নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই : গয়েশ্বর এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বহুদলীয় গণতন্ত্র সবই জিয়া পরিবারের অবদান। আজকে বিদেশি রেমিট্যান্স ও গার্মেন্টসের ওপর ভর করে রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, এগুলোও জিয়াউর রহমানের অবদান। জিয়াউর রহমানের সততা নিয়ে কারো কথা বলার সুযোগ নেই। শুক্রবার দুপুরে বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয়ের নিচতলায় বিএনপির প্রতিষ্ঠা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করতে খালেদা জিয়াকে প্রায় ৭ বছর বন্দি করে রাখা হয়েছে। সরকারের হীন চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। আজকে দেশের মানুষের আস্থাস্থলে পরিণত হয়েছেন তারেক রহমান। আজকে এই তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। যেদিন সে আসবে তার ঢেউয়ে আপনারা কোথায় ভেসে যাবেন তা চিন্তা করুন। গয়েশ্বর বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, যুদ্ধের সময় খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন? জিয়াউর রহমান সম্মুখ যোদ্ধার অপরাধে দুই শিশু সন্তানসহ বন্দি রাখা হয় খালেদা জিয়াকে। আপনি প্রধানমন্ত্রী সে সময় কোথায় ছিলেন? সে সময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির ভাড়া কারা দিয়েছে? কারা আপনার বাসায় নিরাপত্তা দিত? আপনি যুদ্ধের সময় যখন মেডিকেল চেকআপ করাতেন তখন সে গাড়ির চালকও ছিল পাকিস্তানি আর্মি। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) পাকিস্তানিদের টাকায় খাবার খেয়েছেন। যাদের কোনো অবদান নেই তারাই এগুলো বলতে পারে। তিনি আরও বলেন, বন্যরা বনের সুন্দর আর ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গনে। ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গনে যেতে পারবে না। ক্লাস করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসতে হয়। প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় হাজিরা দিতে যেতে হয়। আগ্রাসী শক্তি ছাত্র-যুবকের কণ্ঠরোধ করছে। ১৭ বছরে অনেক মেধাবী ছাত্রের জীবন ধ্বংস করা হয়েছে। যুবকরা নিজ নিজ স্থান থেকে বিতাড়িত হয়ে রাজপথে ঘুরছে। আজকে ছাত্রদের যুদ্ধ করে প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকতে হচ্ছে। এটি একটি অভিশপ্ত জীবন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উলস্নাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) জাহাঙ্গীর আলম, প্রচার সম্পাদক (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদা) শরিফ প্রধান শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গনেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা। অপকর্ম থেকে দৃষ্টি সরাতে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে এদিকে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের অপকীর্তি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে বিদু্যৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতেই বিদু্যৎ, গ্যাস, পানি, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। জনগণ এ নিয়ে হইচই করুক। আর এগুলোর (বেনজীর-আজিজ) দিকে নজর যেন না যায়, মনোযোগ যেন না থাকে। যেগুলো এখন সবার চোখের সামনে ভাসছে। এ কারণে তারা এ দাম বাড়াচ্ছেন। শুক্রবার পানি-বিদু্যৎ ও গ্যাসের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বারবার বৃদ্ধি ও বগুড়ায় তারেক রহমানের উদ্বোধনকৃত 'মু্যরাল' ভাঙার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন। বিক্ষোভ সমাবেশে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান ও পুলিশের প্রধানও যে মাফিয়াতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত সেটা জনগণ কিছুটা জানলেও, বিস্তারিত জানত না। তারা আন্দোলন দমন করেছে। তৎকালীন আইজিপি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু ওরা নিজেরাও যে এত বিত্তবৈভবের মালিক, এটা জনগণ এখন জানছে। কেন তাদের এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে? কারণ ওরাই তো, বিএনপির মিছিল, বিএনপির কর্মসূচি, আন্দোলনকামী মানুষের যেকোনো ধরনের সমাবেশ তারা অত্যন্ত নির্দয়-নির্মমভাবে দমন করেছে। এর পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনা তাদের একের পর এক পদোন্নতি দিয়েছেন। বেনজীর সাহেবকে এসপি থেকে পুলিশ কমিশনার, পুলিশ কমিশনার থেকে আইজিপি করেছেন। আর উনি যে অপকর্ম করেছেন, শেখ হাসিনা সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করেছেন। কারণ তিনিই তো অবৈধ। তিনি অবৈধ প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য এ সমস্ত লোকেরা অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা তারা নিতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, বেনজীর-আজিজের মতো আরও অনেকে এ সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে আছে। যারা জনগণকে দমন করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে, তারা মাফিয়া বান্ধব সরকার, তারা সিন্ডিকেট বান্ধব সরকার। এ সরকারই হচ্ছে অপরাধী সরকার। বেনজীর এবং আজিজ সাহেবের সব দায়দায়িত্ব আওয়ামী সরকারের। একদিন জনগণের আদালতে জনগণ বিচারক হয়ে এ সরকারের সমস্ত অপকীর্তির বিচার করবে। বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন হৃদয়ের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুলস্নাহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা শাহ নেসারুর হক, তাঁতী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মৎস্যজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী ও যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু।