বেফাঁস মন্তব্য

সাংবাদিকদের তোপের মুখে এমপি ফারুক

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
প্রশ্ন শুনে রেগে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়ে এলাকা ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ কমপেস্নক্সের প্রধান ফটকে ঘটনাটি ঘটে। আর এ ঘটনার পর এমপির বেফাঁস মন্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলামের করা এক প্রশ্নের জবাবে এমপি বলেন, 'তোমার প্রবলেম হলো তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন কর। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।' সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিকভাবে তার এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তা না হলে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেন। সাংবাদিকদের এমন তোপের মুখে পড়ে দ্রম্নত সেখান থেকে চলে যান এমপি ফারুক। উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল শপথ নেওয়ার পর প্রথম অফিসে যান। এদিন উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা ছিল। সভায় যোগ দিতে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীও যান সেখানে। এমপির সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় এদিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে- এমন আশঙ্কায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। অন্যদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার কয়েকশ' কর্মী-সমর্থক উপজেলা চত্বরে উপস্থিত হন। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহায়তায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকদের চলে যেতে বলেন। এরপরও সেখানে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক থেকে যান। এর কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান ও ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে সেখানে আসেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এসেই তিনি 'এদিকে আসো, এদিকে আসো। সাংবাদিক সাহেবরা এদিকে আসো' বলে সাংবাদিকদের ডাকেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আজ সমন্বয় মিটিং। এই মিটিংয়ে এই লোকগুলো কারা? এই অবৈধ সমাবেশটা কিসের? আমি ইউএনও সাহেবের কাছে প্রশ্ন করলাম। তাকে আমি দুইবার রিং করেছি যে, এই সমাবেশ হঠাও। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব কি না আই ডোন্ট নো। বাট তাকে আমি দুইবার রিকোয়েস্ট করেছি এগুলোকে হঠানোর জন্য।' সাধারণ জনগণ কী একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে প্রথম দিন আসতে পারে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, 'না। আজকে এখানে মিটিং আছে। জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আসতে পারে না। মিটিংয়ের দিনে পারে না।' এ সময় কালের কণ্ঠের রাজশাহী বু্যরো প্রধান রফিকুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, 'আপনার সঙ্গেও অনেক লোক আছে, তারা কেন এসেছেন?' এ প্রশ্ন শুনেই রেগে যান এমপি ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, 'এরা চেয়ারম্যান। শোনো, তোমার প্রবলেম হলো- তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।' সাংবাদিকরা এ সময় বলতে থাকেন, 'আপনি এটা খারাপ বললেন। আপনার কথাটা ঠিক নয়। এমন কথা বলার জন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।' এ সময় ফারুক চৌধুরী প্রতিবাদ করতে থাকা দৈনিক ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিনের নাম ধরে বলেন, 'আমি তোমাকে এ কথা বলি নাই। যে আমাকে প্রশ্ন করেছে, আমি তাকে বলেছি।' তখন সাংবাদিকরা বলতে থাকেন, 'উনি আমাদের সভাপতি। আপনি একজন সাংবাদিককে এ কথা বলতে পারেন না। আপনাকে স্যরি বলে যেতে হবে। আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না।' সাংবাদিকদের এমন তোপের মুখে পড়ে তখন দ্রম্নত সেখান থেকে উপজেলা পরিষদ কমপেস্নক্সের ভেতরে চলে যান এমপি ফারুক। সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী যাকে তাকে যখন তখন অপমানজনক কথা বলেন। তিনি কিছুদিন আগে নিজের এলাকার এক কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়েছেন। তাকে অত্যন্ত যৌক্তিক একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে যে কথা তিনি বলেছেন তা সাংবাদিকদের জন্য অপমানজনক।' রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুর রহমান রকি বলেন, 'এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পুরো সাংবাদিক সমাজকে অপমান করে কথা বলেছেন। তিনি যদি সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা না চান, তাহলে তার সমস্ত ইতিবাচক সংবাদ বয়কট করা হবে। সাংবাদিক ইউনিয়নও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।' উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, 'ঘটনার সময় তিনি ভেতরে ছিলেন। বাইরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। নতুন একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নিতে গেলে তার সঙ্গে অনুসারীরা প্রথম দিন গিয়ে থাকেন। এ জন্যই মানুষ ভালোবেসে আমার সঙ্গে এসেছিল। কেউ এমপিকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসেননি। এ রকম কেউ চিন্তাও করে না।' এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে 'হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশ' করার সঙ্গে ইউএনওর সম্পৃক্ততা থাকার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে চাননি ইউএনও আতিকুল ইসলাম। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, 'এমপি সাহেব কী বলেছেন তা শুনিনি। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে ইউএনও আতিকুল ইসলাম ভালো কাজ করছেন। স্থানীয় রাজনীতির দলাদলির সঙ্গে তার সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর একজন সংসদ সদস্যকে যে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা আছে তা গোদাগাড়ীর ইউএনও দিচ্ছেন এবং আগামীতেও দিয়ে যাবেন।'