জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী পালিত

দেশ এখন দুর্বৃত্ত লুটেরাদের কবলে :মির্জা ফখরুল

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা -যাযাদি
সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী পালন করেছে বিএনপি। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার মাজার জিয়ারত ও দরিদ্রদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশকে 'সেবাদাস' রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই জিয়াউর রহমানের মতো জাতীয়তাবাদী নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আলোচনা সভা, পোস্টার প্রকাশ ও কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্রসামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাতার শাহাদতবার্ষিকী পালন করছে বিএনপি। ভোরে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত, কালো পতাকা উত্তোলন করে শাহাদতবার্ষিকীর কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বেলা ১১টায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতৃত্বে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নেতাকর্মীরা। শহীদ নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি দুর্বৃত্তদের কবলে, বাংলাদেশ এখন লুটেরা মাফিয়াদের কবলে। একদিকে তারা (সরকার) রাজনৈতিক অধিকার হরণ করছে, অন্যদিকে তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এটাকে পরনির্ভরশীল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। এর বিরুদ্ধে বিএনপি লড়াই করছে। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নির্বাসিত। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কলাকৌশল করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে ক্ষমতা দখল করে আছে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চাচ্ছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। আজ বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে দলের শপথ হচ্ছে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। মাজার জিয়ারতের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, রফিক শিকদার, আমিরুজ্জামান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনসহ অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগরের রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু প্রমুখ। বিএনপি ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদাভাবে জিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প খোলা হয়। সেখানে দিনব্যাপী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ প্রদান করেন। জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে আগারগাঁও লায়ন চক্ষু হাসপাতাল, হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণে, সেগুনবাগিচা, শাহজাহানপুর, নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ একাধিক স্থানে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। এই সময়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগরের দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক প্রমুখ নেতারা ছিলেন। মিরপুরের পলস্নবী শপিং সেন্টারসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচিতে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্য। দুপুরে শাহজাহানপুরে দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহসনের হত্যাকান্ড 'একেবারে পরিকল্পিত'। বাংলাদেশকে সেবাদাসে পরিণত করার জন্য এবং পরনির্ভরশীল একটা রাজ্যে পরিণত করার জন্য সেদিন এই জাতীয়তাবাদী নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে দুপুরে কাফরুল এলাকায় খাবার বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন তারা নির্বাচনকে নির্বাসনে দিয়েছেন। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন না। সবকিছু বন্দি করেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য জিয়াউর রহমানের আদর্শ, সততা ধারণ করে কাজ করতে হবে। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিংসহ দলের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। চকবাজার এলাকায় দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। মালিবাগ ও রামপুরা এলাকায় খাবার বিতরণ করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।