চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট :ইঞ্জিন ও ক্রু সংকটে স্পেশাল ট্রেন বন্ধ

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০

চট্টগ্রাম বু্যরো
কক্সবাজারে রেলপথ উদ্বোধনের পর শুধু ঢাকা থেকেই ট্রেন সার্ভিস চালু করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বিগত ঈদুল ফিতরের সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সাময়িকভাবে চালু করা বিশেষ একটি ট্রেনের সময় বাড়িয়ে আগামী ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করেছিল। কিন্তু ইঞ্জিন ও ক্রু সংকটের কারণ দেখিয়ে ঈদুল আজহার দুই সপ্তাহ আগেই জনপ্রিয় এ ট্রেনটি বন্ধ করে দিচ্ছে রেলওয়ে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন নং ৩ ও ৪-এর সার্ভিস আগামী ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু ইঞ্জিন ও ক্রু সংকটের কারণে যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনটির বর্ধিত সার্ভিস ২৯ মে তারিখের পর বন্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চলের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (প্যাসেঞ্জার) কামাল আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে ট্রেনটির সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। রেলের পরিবহণ ও বাণিজ্যিক বিভাগ বলছে, পর্যটন শহর কক্সবাজারে ট্রেন সার্ভিস চালুর পর চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি কোনো ট্রেন চালু করা হয়নি। ঢাকা থেকে বিরতিহীন দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলেও চট্টগ্রামের যাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ওই দুটি ট্রেনে প্রতিটিতে মাত্র দুটি কোচ (একটি এসি ও একটি নন-এসি) চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়। যদিও কক্সবাজারে রেলপথ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দুটি ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কক্সবাজারে বাণিজ্যিক ট্রেন চালুর প্রায় ৬ মাস হলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে এখনো সরাসরি স্থায়ী কোনো ট্রেন চালু করতে পারেনি রেলওয়ে। এদিকে কোরবানির ঈদের আগে কক্সবাজার রুটের চলমান স্পেশাল ট্রেনের সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ায় রেলপথমন্ত্রী ঘোষিত ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার রেলপথমন্ত্রী রেলভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঈদুল ফিতরে দেশব্যাপী ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক জোড়া বিশেষ ট্রেন সার্ভিসও রয়েছে। কিন্তু কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত নির্ধারিত (১০ জুন) ট্রেনটির সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে বিশেষ ও স্থায়ীভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে রেলের পরিবহণ বিভাগও। জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম-চট্টগ্রাম) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন সার্ভিস চালানোর পক্ষে। রোজার ঈদে চালু হওয়া ট্রেনটির জনপ্রিয়তা ও যাত্রী চাহিদার কারণে দুই দফায় সময় বাড়িয়ে আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চালু রাখা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৌশল বিভাগের পক্ষ থেকে ইঞ্জিন ও চালক সংকটের কারণে আপত্তি দিচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের সার্ভিস বন্ধ করতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। ঈদের দিন বাদ দিয়ে ট্রেনটি চলাচলের কথা ছিল ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ঈদ-পরবর্তী ১৭ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এ ট্রেন ফের চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও সময় বাড়িয়ে ২০ মে পর্যন্ত সার্ভিস বর্ধিত করা হয়। রুটটিতে ব্যাপক যাত্রী চাহিদার কারণে দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত করে পরিবহণ বিভাগ। ২১ মে থেকে ট্রেনটির কোচের সংখ্যা ৫টি বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়। স্পেশাল ট্রেনটি শুরুতে ৪৩৮ যাত্রীর সক্ষমতা থাকলেও ২১ মে থেকে ৭০৫ জন যাত্রী পরিবহণ করছিল। ট্রেনটি উভয়পথে চট্টগ্রামের ষোলশহর, জান আলী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামুতে যাত্রা বিরতি দিচ্ছে। রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ১০ জুনের পর আগামী ঈদুল ফিতরের স্পেশাল ট্রেন হিসেবে চালানোর মাধ্যমে এক পর্যায়ে ট্রেনটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের চার ট্রিপের স্থায়ী ট্রেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু শুধু ইঞ্জিন ও লোকবলের অজুহাত তুলে রেলভবন ট্রেনটির সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠী ছাড়াও কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের যাত্রীরা এ দুই জেলার মধ্যে আন্তঃনগর ও এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসছিল। ট্রেন চালুর ৬ মাস পরও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশনের যাত্রীদের জন্য ট্রেন সার্ভিস না থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষোভ বাড়ছে বলে স্বীকার করেছেন রেলওয়ের পরিবহণ বিভাগের কর্মীরা। তথ্যমতে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মিটারগেজ ইঞ্জিনের হোল্ডিং ১৫৩টি। রেলের দৈনিক নিয়মিত চাহিদা ১১৬টি হলেও পাওয়া যায় মাত্র ১০০টি। যদিও যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ ১০০টি ইঞ্জিনের সরবরাহ দেওয়ার কথা থাকলেও দৈনিক সচল ইঞ্জিন পাওয়া যায় ৮৫-৮৭টি। যার কারণে প্রতিদিনই বিকল্প ইঞ্জিনের জন্য বসে থেকে অনেক ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়। বিশেষত মালবাহী একাধিক ট্রেনের যাত্রা বাতিল হচ্ছে নিয়মিত। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি দুর্ঘটনায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় একাধিক রুটে ট্রেন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে। এ জন্য আসন্ন ঈদুল আজহার আগে জনপ্রিয় ও লাভজনক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটির সার্ভিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে পরিবহণ বিভাগ।