চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় রাতের আঁধারে ঘরে ঢুকে এক বৃদ্ধা ও তার নাতিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার ২ নম্বর বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- রাধাসা গ্রামের বকাউল বাড়ির প্রবাসী ইউসুফের ছেলে আরাফাত হোসেন (১২) ও তার দাদি হামিদা (৭০)। আহত হয়েছেন হামিদুন্নেছার নাতনি হালিমা আক্তার মিম (১৫)। মিম শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আরাফাত একই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
নিহত বৃদ্ধার ছোট ছেলের স্ত্রী জানান, হামিদুন্নেছার তিন ছেলে প্রবাসী। তিন ছেলের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তারা ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। সোমবার রাতে নাতি-নাতনিদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তার শাশুড়ি। এ সময় বোরকা পরে এক যুবক দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। এরপর ঘরে থাকা লোকদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে দাদি হামিদুন্নেছা নিহত হন। আর নাতি আরাফাত হোসেনকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে নাতনি হালিমা আক্তার মিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই গ্রামের খানবাড়ির বাবলু জানান, 'রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিহত আরাফাতের মা শাহিন আমাকে ফোন করে তাদের বাড়িতে ডাকাত ঢুকেছে, অনেককে কুপিয়েছে বলে ফোন করে। পরে স্থানীয় মসজিদের মাইকে বকাউল বাড়ির ডাকাত ঢুকেছে বলে প্রচার করা হয়। পরে আমিসহ কয়েকজন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি ইউসুফের মায়ের মৃতদেহ খাটের ওপর পড়ে আছে। আরাফাত ও হালিমা আহত অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।'
তিনি আরও বলেন, 'স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও অন্যদের সহযোগিতায় আহতদের কাঁধে করে রাস্তায় এনে পাশের বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে হাসপাতালে আসি। আসার পথেই আরাফাত মারা যায়। হাসপাতাল থেকে হালিমাকে কুমিলস্নায় রেফার্ড করা হয়। শুনেছি সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। তার পিঠে ও বুকে কোপ দেওয়া হয়েছে।'
অটোরিকশা চালক জহির জানান, 'রাতে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। আনুমানিক সাড়ে ১২টার পরে আমার বাড়িতে আহত আরাফাত ও তার বোন হালিমাকে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। পরে আমার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে তাদের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে আসি।'
একই বাড়ির সাহাবুদ্দিন জানান, 'ডাকাতির ঘটনায় ফোন পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে যাই। আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা জানান, তার ঘরের তালা ভেঙে তার ঘরেও ডাকাত দল প্রবেশ করেছে। সে অন্য একটি রুমের দরজা আটকিয়ে বিভিন্ন জনকে ফোন করে বাড়িতে ডাকাতি হচ্ছে বলে জানাচ্ছিল। ডাকাত দল কালো বোরকা পরা ছিল।'
আবদুল গণি নামে ওই বাড়ির একজন বলেন, হত্যার পেছনে দু'টি কারণ থাকতে পারে। একটি মিমকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করেছে তার পরিবার। অন্যটি গ্রামের কয়েকজন তাদের ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে।
ইউপি সদস্য মো. অরুণ বলেন, রাতে হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরিবারে তিন পুরুষ সদস্য প্রবাসে থাকেন। দাদিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। আর নাতি-নাতনিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর নাতি মারা যায়। তার জিহ্বা কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয়রা জানায়, ডাকাত দল ডাকাতির উদ্দেশ্য ওই ঘরে প্রবেশ করলে, ঘর থেকে কোনো স্বর্ণালংকার খোয়া যায়নি। এমনকি নিহত হামিদা বেগমের গলায়ও স্বর্ণের চেইন ও কানে স্বর্ণের দুল আছে।
হত্যার ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রশিদ বলেন, ঘটনাস্থলে পিবিআই, সিআইডি,র্ যাব ও পুলিশের তদন্ত টিম কাজ করছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার দে বলেন, এটি ডাকাতির ঘটনা হতে পারে না। হত্যার পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে। সেই সব সূত্র ধরে তদন্ত কাজ চলছে। ইভটিজিং, পরকীয়া ও এক নাতনির দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের আঁচ পাওয়া গেছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, 'এ জোড়া খুনের ঘটনার সংবাদ পেয়েই ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনার সূত্র আমরা পেয়েছি। সেই সূত্র ধরে আমাদের পিবিআই, সিআইডি,র্ যাব ও পুলিশের তদন্ত টিম কাজ করছে। খুব দ্রম্নত আমরা খুনিদের আইনের আওতায় আনতে পারব।'