সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ ইসু্যতে সরকার বিব্রত নয় জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের বিচার করার সৎ সাহস আছে। সরকার তাদের অপরাধ অস্বীকার করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি। দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারপ্রধান আপসহীন। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ যদি অপরাধী হন, তার বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে পারবে দুদক। মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করে বের করছে। দুদক স্বাধীন। এই স্বাধীনতা শেখ হাসিনা দুদককে দিয়েছেন। দুদক জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে এখনো তদন্ত হচ্ছে এবং আরও তদন্ত হবে।'
সেতুমন্ত্রী বলেন, 'তদন্ত হচ্ছে মানে, মামলা হলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কোনো অপরাধী শাস্তি ছাড়া পার পাবেন না শেখ হাসিনার আমলে। অপরাধী হলে অপরাধের জন্য শাস্তি পেতেই হবে। তিনি যে-ই হোন।'
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে একজন সৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে তার সততা ও পরিশ্রম। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।'
সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সরকার পরিবর্তনের উপায় দু'টি- একটি হলো গণঅভু্যত্থান, আরেকটি হলো নির্বাচন। গণঅভু্যত্থান বিএনপির গলাবাজিতে ছিল, বাস্তবে ছিল না। গণ-আন্দোলনও তারা করতে পারেনি। যে আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত নয়, সে আন্দোলন কখনো সফল হয় না। জনগণ সম্পৃক্ত ছিল না বলেই তাদের আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তারা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পরও ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪২ শতাংশের বেশি। তারা বর্জন করে নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, জনগণের অংশগ্রহণও ঠেকাতে পারেনি।'
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বিএনপি নিজেদের অপরাধকে ঢাকার জন্য অপপ্রচার করছে এবং অপরাধীদের ক্ষমা করেছে। তাদের আমলে অপরাধীদের কোনো দিন শাস্তি পেতে হয়নি। আজ বিএনপির নেতারা বলে থাকেন, তারেক রহমানকে কীভাবে শাস্তি দেবে সরকার?'
সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, 'শাস্তি তো তারেক রহমান পেয়ে গেছেন। দুদকের মামলায় ৯ বছর কারাদন্ড হয়েছে। সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের কিছু টাকা বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে। অর্থ পাচারের মামলায় তারেক রহমানের ৭ বছর সাজা ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। এখন শাস্তির বাস্তবায়নটা করতে হবে। শাস্তি কার্যকর করতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। তারেক রহমানের শাস্তি কার্যকর হতেই হবে।'
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাতে দেশে হত্যা ও গুমের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়েছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, 'জিয়াউর রহমানের আমলে তিন হাজারের বেশি রাজনৈতিক কর্মীকে গুম-খুন করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। সেটা কি বিএনপি ভুলে গেছে? এ দেশের মানুষ এখনো সেই হত্যা, গুমের রোমহর্ষক কাহিনি ভুলে যায়নি। আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের ৬২ হাজার লোক কাদের আমলে কারাগারে ছিলেন? যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের মুক্তি দিয়েছে জিয়াউর রহমান। এর মধ্যে ৭০৩ জন দন্ডিত আসামি ছিলেন। অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এটা সত্য নয়।'
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনকে গুম করে খুন করেছে বিএনপি। এর বিচার কে করেছে?'
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলটির নেতারা এখন কথায় কথায় সাবেক আইজিপির দুর্নীতির কথা বলেন বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বিএনপির আমলে সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদার বিচার কি করেছেন তারা? চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের সঙ্গে জড়িত রফিকুল ইসলামের বিচার কি বিএনপি করেছে? এসপি কহিনুর, যার হাতে কত রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতিত হয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী পর্যন্ত রাজপথে মিছিল করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার নির্যাতন, দুর্নীতির কথা ঢাকা শহরের মানুষের মুখে মুখে। কহিনুরের বিচার কি হয়েছে? তাদের আমলে যেসব নেতাকর্মী দুর্নীতি করেছে, হাওয়া ভবনের দুর্নীতি- এসবের বিচার কি তারা করেছে?'
সেতুমন্ত্রী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এ দেশে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে একমাত্র ক্ষমতাসীন রাজনীতিক যিনি অপরাধীকে নিজের দলের লোক হলেও ক্ষমা করেন না। এর প্রমাণ তিনি রেখেছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আবরার হত্যাকান্ডে জড়িত ছাত্রলীগের কর্মীদের কি ছাড় দেওয়া হয়েছে? বিশ্বজিৎ দাসের হত্যার বিচারের কথা সবার জানা আছে।'