রাবিতে হলের সিট থেকে শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশ | ২৭ মে ২০২৪, ০০:০০

রাবি প্রতিনিধি
হলের সিট নিয়ে নেতিবাচক শিরোনামে সারাবছরই আলোচনায় থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। রুম ওয়ার্ক ও জয় বাংলা বস্নাড সার্ভিসের মতো নানা নামে হলের শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ও মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সিট ছেড়ে চলে যেতে চাপ দেওয়া হয়। কাউকে বের করে দেওয়া হয় জোরপূর্বক। সর্বশেষ শনিবার মাদার বক্স হলের ৪টি কক্ষে ঘটে লঙ্কাকান্ড। প্রথম বস্নকের ৪১৭ নম্বর রুমে এক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে নিজ কর্মীকে তুলে দেওয়া, ২য় বস্নগের ৩১৯ নম্বর কক্ষে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী, একই বস্নকের ৩২৫ নম্বর ও ৩য় বস্নকের ৩৪৯ নম্বর কক্ষে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মার্কেটিং বিভাগের দুই আবাসিক শিক্ষার্থীকে ডাবলিং করে থাকার হুমকি দেওয়া হয়। এসব ঘটনা হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসানের নেতৃত্বে ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি সাধারণ সম্পাদক আসাদুলস্নাহ-হিল-গালিবের অনুসারী। প্রায় ৭ বছর পর ছাত্রলীগের এই শাখাটির কমিটি ঘোষণা হলে ক্যাম্পাসে প্রথম প্রবেশ করে সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুলস্নাহ-হিল-গালিব সিট বাণিজ্য বন্ধ করার ঘোষণা দেন। এ সময় রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, 'এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি সমস্যার নাম সিট বাণিজ্য। আমি রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছি যদি আমাদের কোনো নেতাকর্মী সিট বাণিজ্যের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে, তাহলে হয় সে ছাত্রলীগ করবে, নয়তো আমি ছাত্রলীগ করব। আজ থেকে সিট বাণিজ্যের কবর রচনা ঘোষণা করলাম।' কিন্তু নতুন কমিটির সেই বক্তব্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সাময়িক স্বস্তি দিলেও বর্তমানে তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। প্রতিনিয়ত হলের সিট দখল, শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়া ও এক সিটে ডাবলিং করে থাকার হুমকি-ভয় দেখানোর অভিযোগ নৈমিত্তিক ঘটনা। ভুক্তভোগী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ ও মার্কেটিং বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, 'আমরা এখনো হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। আমাদের মাস্টার্সের থিসিস এখনো বাকি আছে। অনেকের নিয়মিত ক্লাস হয়। একাডেমিকভাবে খুব চাপে আছি। এমন অবস্থায় আমাদের ডাবলিং করে থাকতে বলা হয়েছিল। আমরা সাধারণ সম্পাদক গালিব ভাইয়ের সাথে কথা বলে একটা সমাধানে এসেছি। আপাতত আমাদের কক্ষে হয়তো ডাবলিং করে থাকতে হবে না? কিন্তু ভয় বা একটা আতঙ্ক-শঙ্কা তো থেকেই যায়।' এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসান বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম তাদের মাস্টার্স শেষ। তারা শিগগিরই হল থেকে চলে যাবে। তাই তাদের রুমে কিছু জুনিয়রদের থাকতে বলেছিলাম। সবার সাথে কথা বলে আমি বুঝতে পেরেছি তারা এখনই হল ছেড়ে যাচ্ছেন না। তাই এখন আর কেউ তাদের রুমে যাবে না।' এদিকে হলের ১ম বস্নকের ৪১৭ কক্ষের সোহেল আল মাহমুদ নামে এক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে আরেকজনকে তুলে দেওয়া হয়। ছাত্রলীগ নেতার অভিযোগ সে অনাবাসিক। তার হল কার্ড নেই। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, তিনি ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে হলের সিটে থাকছেন। অসংখ্যবার প্রাধ্যক্ষ বরাবর অনুরোধ ও আবেদন জমা দিয়েছেন হলের কার্ড করার জন্য। তখন প্রাধ্যক্ষ তাকে কার্ডের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন এবং হলে থাকার মৌখিক অনুমতি দেন। কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগ নেতা মিশকাত হাসান তার রুমে এসে দেখেছে কার্ড আছে কিনা এবং বলেছিল দ্রম্নত করে নিতে। প্রাধ্যক্ষ গত রোববারে পুনরায় দেখা করতে বললেও শনিবার রাতে তার সিটে আরেকজনকে তুলে দেন হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের এই নেতা। তবে নতুন যাকে সিটে তুলে দেওয়া হয়েছে সেও কাউকে তার হল কার্ড দেখাতে পারেনি। হল প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করার অধিকার তার আছে কিনা জানতে চাইলে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা বলেন, 'এই বিষয়ে হল প্রভোস্ট আছে। আমার সভাপতি-সেক্রেটারি আছে তাদের জিজ্ঞেস করেন।' শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুলস্নাহ-হিল-গালিবের কাছে একাধিকবার ফোন ও সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে মাদার বক্স হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. রোকনুজ্জামান বলেন, 'এরকম কোনো দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের দায় হল প্রশাসন নিবে তবে অনাবাসিক শিক্ষার্থীর দায় হল প্রশাসন নিবে না।' হল প্রাধ্যক্ষ আরও বলেন, 'হলের কোনো আবাসিক শিক্ষার্থী আমার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ না করলে তো আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। অভিযোগ আসলে আমরা খুব দ্রম্নত সমাধান করার চেষ্টা করব।'