বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ৬৮ কোটি টাকা

বেনাপোল বন্দর দিয়ে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৩ টন

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০

বেনাপোল প্রতিনিধি
বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে। ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বন্দরে ৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৫ হাজার ২১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ১৭ লাখ ৫৫৩ টন। আর চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি করা হয়েছে ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৩ টন। পণ্য কম আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৫ টন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও দামের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় তারা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। দ্রম্নত এ সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ আরও কমে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। কাস্টমস সূত্র জানায়, ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। আমদানি স্বাভাবিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমদানি কমে যাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না বেনাপোল কাস্টমস। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছে। এতে আমদানি কমে দেখা গেছে রাজস্ব ঘাটতি। তবে অর্থবছর শেষে এ সংকট মোকাবিলা করে বাণিজ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশা করেন। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, 'বৈশ্বিক মন্দায় ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে ব্যাংকগুলো ডলারের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ানোয় এলসি খুলতে পারছি না। সরকারের নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও বর্তমানে ১০০ ডলারের বিপরীতে ব্যাংক ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা পর্যন্ত কাটছে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত ও আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।' যশোরের মোটর সাইকেল পার্টসের বৃহৎ আমদানিকারক রিপন অটোসের চেয়ারম্যান এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, 'ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোও এলসি করতে চাইছে না। এতে করে মোটরপার্টস ও মোটর সাইকেল পার্টসের আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না।' যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, 'ডলার সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। আবার কিছু এলসি করা গেলেও ডলারের বিনিময় হার বেশি লাগছে। এতে করে পণ্যের দাম বেশি হচ্ছে। আমদানি কমে গেলে সরকারের রাজস্ব আদায় কম হবে এটাই স্বাভাবিক।' বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন জানান, 'ব্যবসায়ীরা পণ্য আনার জন্য ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছেন না। যে কারণে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আদায়ও স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে।'