শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

বিএসএমএমইউতে 'মডেল ওয়ার্ড' অকার্যকর

পাঠান সোহাগ
  ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০
বিএসএমএমইউতে 'মডেল ওয়ার্ড' অকার্যকর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগে ২০১৭ সালে 'মডেল ওয়ার্ড' চালু করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল রোগীদের নিরাপত্তা, সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ট্রেনিংসহ রোগীর স্বজনদের দুশ্চিন্তা কমানো। কিন্তু বাস্তবে মডেল ওয়ার্ডের কোনো সুফলই পাননি তারা।

সরেজমিন বিএসএমএমইউয়ের ডি বস্নকের ১৭ তলায় ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগে মডেল ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর স্বজন, নার্স ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএসএমএমইউতে ২০১৭ সালে বিশ্ব নার্স দিবসে 'মডেল ওয়ার্ড' চালু হয়েছিল। ২০ শয্যাবিশিষ্ট মহিলা ও ২৮ শয্যার পুরুষ ওয়ার্ড নিয়ে প্রথমবারের মতো মডেল ওয়ার্ড উদ্বোধন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। সে সময় তিনি প্রতিশ্রম্নতিও দিয়েছিলেন আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সব ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ডে উন্নীত করা হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, উন্নত দেশের হাসপাতালগুলোতে একবার রোগী পৌঁছতে পারলে রোগীর সব দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশ এর উল্টো। হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসলে ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ রোগীর সেবাযত্ন সব কিছুই রোগীর স্বজনদের করতে হয়। এতে দেখা গেছে, হাসপাতালে রোগী থাকলে দুইজন 'স্ট্যান্ডবাই' হাসপাতালেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে রোগীর চিকিৎসা খরচ বেড়ে যায়।

তারা বলেন, বিএসএমএমইউতে মডেল ওয়ার্ড চালু হয়েছিল। সেটা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। সেটা এখনও চলমান থাকলে অন্য হাসপাতালের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকত। তখন অন্য হাসপাতালগুলো এটা অনুকরণ করতে পারত। চাইলে এখনও কিন্তু বিএসএমএমইউতে মডেল ওয়ার্ড চালু করতে পারে।

সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের (এসএনএসআর) মহাসচিব ও বিএসএমএমইউয়ের সাবেক সিনিয়র স্টাফ নার্স সাব্বির মাহমুদ তিহান যায়যায়দিনকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাসপাতালগুলো একই সিস্টেমে চলে। দেশের হাসপাতালে মডেল ওয়ার্ড চালু করে সেটা চালিয়ে নিতে পারলে ভালো। মডেল ওয়ার্ডের রোগী সব সময় দ্রম্নত সুস্থ হয়। পাশাপাশি রোগীর চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমবে। রোগীর স্বজনরা যদি ওয়ার্ডে কম প্রবেশ করে তাহলে পরিবেশও সুন্দর থাকবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগকে মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে ৪৯টা শয্যা আছে। প্রতি শয্যায় রোগী আছে। শয্যার বাইরে কোনো রোগী নেই। তবে একেক শয্যায় একজন রোগীর সঙ্গে দুই, তিনজন স্বজন বসে আছেন। এমনকি কোনো কোনো শয্যায় রোগীর সঙ্গে চারজন আত্মীয়-স্বজন বসে থাকতে দেখা গেছে।

বিক্রমপুরের ৭৫ বছরের মালেকা বানু মহিলা ওয়ার্ডের ইউনিট-২ এর ১ নম্বর শয্যায় ভর্তি আছেন। রোগীর মেয়ে ঝুলেকা বেগম যায়যায়দিনকে বলেন, 'দুই সপ্তাহ আগে এখানে ভর্তি হয়েছি। এই ১৫ দিন শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেই গেছে। এখন কয়েকটা রক্তের পরীক্ষা বাকি। ওষুধ চলতাছে কিন্তু সঠিক রোগ নির্ণয় হয়নি। পুরুষ লোক না থাকলে কোনো কিছুই আগায় না। পুরুষ ওয়ার্ডের ইউনিট-২ এর ২ নম্বর শয্যার চার দিন ধরে ভর্তি আছেন রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫৬ বছর বয়সি এহসান আলি। রোগীর ছেলে মো. রায়হান জানান, 'চার দিনে কিছু পরীক্ষা করাইতে পেরেছি। আর কিছু পরীক্ষার তারিখ বলে দিয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে এখনও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি পরীক্ষা নিয়ে করত তাহলে আমাদের ভোগান্তি কমত।'

এ সময় ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, এই দুই ওয়ার্ডে (মহিলা ও পুরুষ) মডেল ওয়ার্ড চালু ছিল। কিন্তু কয়েকবার চেষ্টা করার পর ব্যর্থ হয়ে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যায়। মডেল ওয়ার্ড যে কনসেপ্টে করা হয়েছিল, তা কার্যকর করা যায়নি পর্যাপ্ত জনবল না থাকার কারণে।

ওই সিনিয়র স্টাফ নার্স আরও বলেন, এ ওয়ার্ডে যেসব রোগী ভর্তি হয় তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ থাকে। ওঠানামা ও খাওয়ার জন্য দুইজন করে লোক দরকার। রোগীর আত্মীয়-স্বজন যদি ওয়ার্ডে ঢুকতে না পারে তাহলে রোগীকে সেবাযত্ন কে করবে। এছাড়া রোগীর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ সংগ্রহ করতে একজন মানুষের প্রয়োজন পড়ে। এখানে মডেল ওয়ার্ড চালু হওয়ার পর শুধুমাত্র কয়েকজন নার্স ও কয়েকটা বিছানার নতুন চাদর দিয়েছিল। যখন দেখা গেল এখানে ভালো কিছু হচ্ছে, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবার নার্সদের সরিয়ে নিল। এর পর থেকে সেটা আগের মতোই হয়ে গেল।

তিনি আরও বলেন, মডেল ওয়ার্ড শুরুর দিকে দিনের একটা নির্দিষ্ট

সময় এই ওয়ার্ডে ঢুকতে পারত কিন্তু এখন যে যার মতো এখানে আসছে যাচ্ছে। এতে আমাদের কিছু করার থাকে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, '২০১৭ সালে আমাদের এখানে মডেল ওয়ার্ড চালু হয়েছিল। মডেল ওয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ওই ওয়ার্ডটি সাধারণ ওয়ার্ডের মতোই চালু আছে। কী কী উদ্দেশ্য নিয়ে মডেল ওয়ার্ড চালু হয়েছিল, সেই কার্যক্রম কেন বন্ধ সেটা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে