শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

সব প্রাণের শুভ কামনায় বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে প্রার্থনা করছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। ছবিটি বুধবার রাজধানীর মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম

গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও শান্তির বাণী অন্তরে ধারণ করে নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা। এ ধর্মের অনুসারীরা এই পূর্ণিমা তিথিতে স্নান করে শুচিবস্ত্র ধারণ করেছেন। মন্দিরে মন্দিরে হয়েছে বুদ্ধের বন্দনা। অর্চনার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ ও সমবেত প্রার্থনায় স্মরণ করা হয়েছে তাদের ধর্মের প্রবর্তককে।

বৌদ্ধ দর্শনের মূল লক্ষ্য সত্যকে উপলদ্ধি করে দুঃখমুক্তি। বুদ্ধের শিক্ষা- মানুষ কর্মের অধীন, জগতে কর্মই সব। যার যেমন কর্ম, তিনি ফলও পাবেন তেমন। এ দর্শনের মূলমন্ত্র- 'সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু', অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

বুধবার রাজধানীর সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে আয়োজন করা মূল অনুষ্ঠান। আর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারেও ছিল দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এ ছাড়া দেশের শান্তি কামনায় বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিতেও ছিল নানা আয়োজন।

এদিন ভোর থেকেই ভক্তরা জড়ো হন সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে, অংশ নেন প্রভাতফেরি, প্রাতঃরাশ, বুদ্ধপূজা, সংঘদান ও ধর্মসভায়।

এ বিহারের অধ্যক্ষ আনন্দ মিত্র মহাথেরো বলেন, 'দিনটি আমাদের কাছে মহাপবিত্র, মহাগুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধ সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনার কথা বলেছেন। বুদ্ধ কোনো নির্দিষ্ট প্রাণীকে লক্ষ্য করে বলেননি যে, ওমুক ভালো থাকুক, তুমুক ভালো থাকুক। বুদ্ধ সকল প্রাণীর শুভ কামনা করেছেন, সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেছেন, তিনি শান্তির কথা বলেছেন, তিনি সকল প্রাণীর প্রতি দয়া পোষণ করেছেন।

আনন্দ মিত্র

মহাথেরো বলেন, 'আমরা যারা বৌদ্ধ ভিক্ষু আছি, আমরা সকল প্রাণীর প্রতি, সকল মানবজাতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করছি। সকল মানবজাতি যেন ভালো থাকে, শান্তিতে থাকে, সকলে যেন সুন্দর দেশ, সুন্দর জাতি, সুন্দর পরিবার নিয়ে বসবাস করতে পারে, সেই আশাই করছি।'

সকাল সাড়ে ৭টায় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে বুদ্ধ বন্দনার পর সবুজবাগ বৌদ্ধ বিহার থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়, এ সময় ওড়ানো হয় বেলুন। এরপর ভক্তরা আসতে শুরু করেন বিহারে। স্নান সেরে শুচিবস্ত্র ধারণ করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত হন তারা।

সকাল সাড়ে ৯টায় বৌদ্ধ পূজা মাথায় নিয়ে ভক্তরা মন্দির প্রদক্ষিণ করেন। এ সময়ে বাদক দল ঢোল বাজায়।

সকালের কর্মসূচির মধ্যে আরো ছিল- জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল ও অষ্টাঙ্গ উপোসশীল গ্রহণ, মহাসংঘদান, ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডদান, ত্রিপিটক পাঠ, প্রদীপ পূজা এবং জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা।

প্রার্থনা শেষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা পাত্রে জল ঢেলে মৃত স্বজনদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে নানা উপচারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। বিহারের বোধিবৃক্ষে পত্র-পুষ্প-জলে পূজা দেওয়া হয় গৌতম বুদ্ধকে। বেলা সাড়ে ১১টায় সবুজবাগ বৌদ্ধ বিহারে পিন্ডদানের মধ্যদিয়ে শেষ হয় সকালের পর্বের অনুষ্ঠান। বঙ্গভবনে বিকালে আয়োজন করা হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

দেশে চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি

বিরাজ করছে : আইজিপি

এ দিকে বুধবার বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল-মামুন।

এ সময় তিনি বলেন, 'সকল ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে আমাদের দেশে চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। এখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকল ধর্মের মানুষ নিরাপদে নির্ভীকচিত্তে নিজ নিজ ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন।'

পুলিশ প্রধান বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমরা আজ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দে মিলিত হতে এখানে এসেছি।'

আইজিপি আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে বর্তমানে যেকোনো সময়ের তুলনায় স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন করছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আতিকুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মুহিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি প্রকৌশলী দিব্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ধর্মমিত্র মহাথের প্রমুখ।

দিনটি উপলক্ষে বুধবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি পালিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে