আমের নতুন রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া উত্তরের খাদ্যভান্ডার বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁ। ধান উৎপাদনের পাশাপাশি বিগত কয়েক বছর আম উৎপাদনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে গেছে নওগাঁ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে এ অঞ্চলের আম। আজ থেকে গুটি আম/স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে বাজারে আসছে নওগাঁর আম। এছাড়া নওগাঁর ঐতিহ্য আম্রপালি আমসহ অন্যান্য জাতের সুস্বাদু ও সুমিষ্ট আম পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ভোক্তাদের।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, নওগাঁর গুটি বা স্থানীয় জাতের আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আজ। এরপর ৩০ মে থেকে গোপালভোগ, ২ জুন থেকে ক্ষিরসাপাত ও হিমসাগর, ৫ জুন থেকে নাক-ফজলি, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা, ২০ জুন থেকে আম্রপালি, ২৫ জুন থেকে ফজলি এবং আগামী ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, বারি-৪, বারি-১১, গৌড়মতি এবং কাটিমন আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
আমচাষিরা বলছেন, বছরের শুরুতে প্রকৃতিতে প্রচন্ড শীত থাকায় গাছে মুকুল আসতে দেরি হয়েছে ১৫-২০ দিন। তাপপ্রবাহে মুকুল ও আমের গুটির ক্ষতি হয়েছে। বাগানের যত্ন ও পরিচর্যায় খরচ বেড়েছে। এবার বিগত বছরের তুলনায় অধিক দামে বিক্রির আশা করছেন তারা।
আর কৃষি
কর্মকর্তারা বলছেন, বরেন্দ্র এলাকার আম দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে অত্যন্ত সুস্বাদু। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় এ জেলার আম্রপালি আমের চাহিদা দেশজুড়ে। জেলায় যে পরিমাণ আম বাগান রয়েছে তার মধ্যে শুধু আম্রপালি চাষই হয়েছে মোট জমির ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশে। সারাদেশে নওগাঁর আম সরবরাহ হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় প্রতি বছর বাড়ছে আম বাগান। ২০২৪ সালে ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর বেশি। ২০২২ সালে ছিল ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর। ২০২১ সালে এ জেলার আম্রপালি আমের মধ্যদিয়ে রপ্তানি শুরু হয়। ২০২৩ সালে ৭ জন চাষির মাধ্যমে ২২১ মেট্রিক টন আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাংগো ইতালি, সুইজারল্যান্ড, লন্ডন ও কাতারসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়েেেছ। ২০২২ সালে রপ্তানি হয়েছে ৭৮ মেট্রিক টন। জেলায় বছরে আমের বাণিজ্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে প্রায় ১৫ হাজার চাষির কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে আম সংগ্রহের মৌসুমে এর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৪ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন হিসেবে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
আমচাষি নুরুজ্জামান বলেন, 'আম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাগানের পরিমাণ বাড়ছে। অন্যবার আমের মুকুল থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিঘাতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়। তবে এ বছর খরার কারণে আরও ৪-৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। খরায় আমের গুটি পড়ে গেলেও যা ছিল, তা আকারে অনেক বড় হয়েছে। তাই গাছে আমের পরিমাণ কম হলেও দাম ভালো পেলে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।'
একই কথা জানান আরও ২৫-৩০ জন আমচাষি।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'এবার আম উৎপাদনের পাশাপাশি ভালো দামও পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আম্রপালি, বারি ও ব্যানানা জাতের আম বাগানের পরিমাণ বেড়েছে। রপ্তানি পরিসর বাড়াতে উত্তম কৃষিচর্চায় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আমের প্রক্রিয়াজাতকরণে উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।'