স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য ব্যয় হবে ১৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫২ টাকা ৪৫ পয়সা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড থেকে এই সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ৮ম লটে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে, বিদু্যৎ বিতরণ আধুনিকায়নে ৩২৫ কোটি টাকার খুঁটি ও তার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রকল্প 'আশ্রয়ণ-২' এর আওতায় পঞ্চম ধাপে আরও ২০ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার লক্ষ্যে যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে তার ব্যয় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করে সম্পন্ন করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, 'সরকার ১ কোটি পরিবারকে যে সাপোর্ট দিচ্ছে তার আওতায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সয়াবিন তেল কিনতে মোট খরচ হবে ১৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৫২ টাকা ৪৫ পয়সা। আগের মূল্য ছিল ১৫২ টাকা ৯৮ পয়সা। অর্থাৎ আগের থেকে লিটারে ৫৩ পয়স কমে এবার সয়াবিন তেল কেনা হবে।
এদিকে, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য অষ্টম লটে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটা প্রস্তাব ছিল রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সার কিনতে মোট ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৭০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি টনের মূল্য ২৭১.৫০ মার্কিন ডলার। এর পূর্বমূল্য ছিল ২৮৪.১৭ মার্কিন ডলার। সুপারিশকৃত দরদাতা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগেস্নাব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড এটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
অন্যদিকে, বিদু্যৎ বিভাগের আওতায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য এক লাখ ২৬ হাজার ৩৫৬টি বিদু্যতের খুঁটি ও বৈদু্যতিক তার কিনতে চারটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৩২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৩১ হাজার ৪৫৬ টাকা।
সচিব জানান, বাংলাদেশ
পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) বৈদু্যতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং ক্ষমতাবর্ধনে (ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগ) প্রকল্পের অন্য একটি প্যাকেজ ১১ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চীনের জংটিয়ান টেকনোলজি সাবমেরিন কেবলস কোম্পানি লিমিটেড এই কেবল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৪৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৯ টাকা।
তিনি বলেন, 'অন্য এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে 'বাপবিবোর বৈদু্যতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং ক্ষমতাবর্ধন (ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগ)' প্রকল্পের অন্য একটি প্যাকেজের আওতায় ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই কেবল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ টাকা।
সচিব আরও জানান, এ প্রকল্পের লট-১ এর আওতায় ৬৩ হাজার ১৭৮টি এসপিসি পোল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে এ পোল কেনা হবে। কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড, কনটেক কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং পোলস অ্যান্ড কনক্রিট লিমিটেড বাংলাদেশ এ পোলগুলো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ২১৩ কোটি ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭০ টাকা।
এছাড়া প্রকল্পের লট-২ এর আওতায় আরও ৬৩ হাজার ১৭৮টি এসপিসি পোল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড বৈদু্যতিক পোলগুলো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ২১২ কোটি ৯৭ লাখ ১০ হাজার ৩৭ টাকা।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রকল্প 'আশ্রয়ণ-২' এর আওতায় পঞ্চম ধাপে আরও ২০ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার লক্ষ্যে যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে, তার ব্যয় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করে সম্পন্ন করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার ৫২০ জন গৃহহীন ও ভূমিহীনকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম পর্যায়ের অবশিষ্ট অংশ আরও ২০ হাজার ভূমিহীনকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঘরগুলো ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এখন ফরমাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
কবে নাগাদ এই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সামারি দেওয়া হয়েছে, জুন মাস ধরেই আমাদের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। এখনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সুবিধামতো সময় দেবেন।