কৃষি প্রযুক্তি চায় বাংলাদেশ, সমুদ্র নিরাপত্তায় আগ্রহ অস্ট্রেলিয়ার

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

প্রকাশ | ২২ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মঙ্গলবার গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং -ফোকাস বাংলা
দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এ সংক্রান্ত প্রযুক্তি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। তবে সমুদ্র নিরাপত্তা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে আগ্রহ দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্য নিয়ে দুদিনের সফরে বাংলাদেশে এসে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করার পর এসব তথ্য জানা যায়। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। আর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন ড. হাছান মাহমুদ ও পেনি ওং। প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম জানান, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি খাতে দেশটির প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকায় কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন।' কৃষি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ গত ১৫ বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনে সফল হয়েছে। আমরা আমাদের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি, তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জমি হ্রাস পাওয়ায় আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে।' তিনি এর উন্নত কৃষি প্রযুক্তি বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, 'সরকারের সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।' নজরুল বলেন, 'তারা কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্যসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।' তিনি এসব বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাদের দেশে আরও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর প্রবেশাধিকারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ইসু্যতে উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রম্নতি পূরণ না করায় হতাশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন ইসু্যতে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রম্নতি পূরণ না হওয়ার কারণে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন।' এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রীকে বলেন, 'বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। আমরা অলস বসে থাকিনি (উন্নত দেশের অপেক্ষায়), আমরা আমাদের জনগণকে বাঁচানোর জন্য আমাদের নিজস্ব ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি।' শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে, কারণ এখানে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আঘাত হানে।' বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ যে কোনো ধরনের যুদ্ধ বা সংঘাতের বিরুদ্ধে। আমরা প্রতিটি সংঘাত নিরসনে আলোচনা ও সংলাপ চাই।' তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।' তিনি উলেস্নখ করেন, 'বাংলাদেশ এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করলেও প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় উলেস্নখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ছোট আয়তনের বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এজন্য আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।' তিনি বলেন, 'সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোক্তারা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে এবং দেশের বিনিয়োগবান্ধব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে মুনাফা অর্জন করতে পারে।' এ সময় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার ও গভীর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অন্যদিকে, বৈঠক শেষে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, 'সমুদ্র নিরাপত্তা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে চায় অস্ট্রেলিয়া। সমুদ্র খাতে কোনো দেশই এসব চ্যালেঞ্জ এককভাবে মোকাবিলা করতে পারে না। আমরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।' ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, 'রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের আমরা সমাধান প্রত্যাশা করি। আমি মনে করি, আপনাদের সরকার যা চায় আমরাও চাই, তা হলো মিয়ানমারের সংঘাতের সমাধান হোক। কেননা রোহিঙ্গারা যেন তাদের প্রত্যাবাসনের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে পারে।' অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলায় আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। এখানে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতাও প্রয়োজন।' তিনি বলেন, 'অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তারা উভয় দেশের জন্যই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।' ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, 'বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। এছাড়া কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষ অভিবাসী পাঠাতে চাই। বৈঠকে মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই খাতে আমরা একযোগে কাজ করবো বলে জানিয়েছি।' এর আগে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসলে পেনি ওংকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল খুরশেদ আলম। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার আলস্নামা সিদ্দিকী তার সঙ্গে ছিলেন। সোমবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পেনি ওং; আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলেন হাছান মাহমুদও। বিবৃতিতে পেনি ওং বলেন, 'শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থ এগিয়ে নিতে আমি এ সপ্তাহে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর সফর করব। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার সম্পৃক্ততা বাড়ানোর এই সময়ে বাংলাদেশে আমার প্রথম সফর করতে পেরে আমি আনন্দিত।'