দেশের তিন জেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় ৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জে তিনজন এবং কুড়িগ্রাম ও কুমিলস্নায় একজন করে দুইজন নিহত হন। রোববার বিকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতের সময় নিহতদের সবাই বাড়ির বাইরে ছিলেন। এদিকে, সৈয়দপুর বিমানবন্দর সূত্র জানায়, রোববার রাতে হঠাৎ বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায় এ অঞ্চলে। সেইসঙ্গে চলে ঘন ঘন বজ্রপাত। বজ্রপাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য সোমবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের সাড়ে তিন ঘণ্টা পর অবতরণ করে।
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের চেলা নদীর সোনাপুর-পূর্বচাইরগাঁও এলাকায় বজ্রপাতের ঘটনায় তিন বালু শ্রমিক মারা গেছেন। তারা হলেন ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও (গনেশপুর) গ্রামের আনছার উদ্দিনের পুত্র দুলন মিয়া (২৮) ও বাহাদুরপুর গ্রামের মুসলিম মিয়ার পুত্র কুদ্দুস মিয়া। মারা যাওয়া আরেকজনের নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৭ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে খারাপ আবহাওয়া থাকার পর সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় নদীতে বালু উত্তোলন করছিলেন ওই তিন
শ্রমিক। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই দু'জন নিহত হন। আহত হন তাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন। পরে হাসপাতালে আরও একজন মারা যান।
দোয়ারাবাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আইনগত জটিলতা শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে, রোববার রাত ১০টার দিকে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ওয়াপদা সড়কে মেহের জামাল নামে (৫০) একজন দর্জি মারা যান। তার বাড়ি সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড়ের নয়ারহাট এলাকায়।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আলমঙ্গীর কবির বাদল স্থানীয়দের বরাতে বলেন, 'রোববার রাত ৮টার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি থামার পর মেহের তার দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ওয়াপদা সড়কে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।'
উলিপুর থানার ওসি গোলাম মর্তুজা বলেন, 'বজ্রপাতে মেহের নামে এক দর্জির মৃতু্য হয়েছে।'
এছাড়া রোববার বিকালে বৃষ্টির মধ্যে কুমিলস্নায় বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন আরিফুর রহমান রিমন নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী। জেলার কোটবাড়ী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। রিমন কুমিলস্না পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা শেষে রোববার বিকালে সহপাঠীদের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজে ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী একটি খেলার মাঠে রিমন ফুটবল খেলতে নামেন। এ সময় বজ্রপাতের আঘাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সহপাঠী ও স্থানীয়রা রিমনকে উদ্ধার করে কুমিলস্না হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির বলেন, 'সোমবার সকালে জানাজা শেষে রিমনকে তার নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।'
অন্যদিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর সূত্র জানায়, 'রোববার রাতে হঠাৎ বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায় এ অঞ্চলে। সেইসঙ্গে চলে ঘন ঘন বজ্রপাত। বজ্রপাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ড্যাশ-৮ ফ্লাইট সিগন্যাল না পেয়ে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে আসেনি।
বিমানের জেলা ব্যবস্থাপক ফয়সাল কবির জানান, রানওয়ে মেরামত শেষে বিমানের ফ্লাইটটি সোমবার ২টা ৫০ মিনিটে সৈয়দপুরে অবতরণ করে। পরে বিকাল ৩টা ১১ মিনিটে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বিমানটি বেলা ১১টায় সৈয়দপুরে আসার কথা ছিল।
ফয়সাল কবীর আরও জানান, বজ্রপাতের কারণে রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিমানবন্দর থেকে তাদের জানানো হয়। রানওয়েতে ফাটল থাকার কারণে ড্যাশ-৮ মডেলের বিমান অবতরণ করানো ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে যাত্রীসহ সকালের ওই বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করে।