কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং শুরু করতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'বৈঠকে নির্ধারিত ইসু্যর বাইরে দু'টি বিষয় ছিল। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বলেছেন, বাজার মনিটরিং যেন জোরালোভাবে হয় এবং ভালোভাবে নজর দিতে বলেছেন। বাজারে পণ্যের সরবরাহ বা সাপস্নাই যেন ঠিক থাকে, সে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'কিছু কিছু পণ্যের সরবরাহ ঠিক আছে। আবার ক্রাইসিস না থাকা সত্ত্বেও বাজারে কৃত্রিমভাবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কঠোরভাবে যেন বাজার মনিটরিং শুরু করা হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
বৈঠকে 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিকও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪' এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের বেতন সুনির্দিষ্ট করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার ১ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা ৯৫ হাজার টাকা করে বেতন পাবেন। এটা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এ বছরের ১৭ এপ্রিল আইনের খসড়া উঠেছিল। তখন নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছিল। আজকে (সোমবার) চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। আইনের আওতায় বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা যে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন সেটি ছিল ১৯৮৩ সালের। সেটি 'দ্য চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড কমিশনারস (রিমিউনেরেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজস) অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩'।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক শাসনামলের যেসব আইন ছিল সেগুলো পরিবর্তনের যে নির্দেশনা আছে তার আলোকে এ আইনটি করা হয়েছে।'
আইনে মূলত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারদের বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে যে আইনটি ছিল মূলত সেই আইনকে অনুসরণ করা হয়েছে। সেটি হলো যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন-ভাতাদি পাবেন এবং নির্বাচন কমিশনার হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন-ভাতাদি পাবেন।
তিনি বলেন, 'এখানে ওই রকম না লিখে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রতিমাসে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাবেন। আর নির্বাচন কমিশনার পাবেন ৯৫ হাজার টাকা। বিশেষ ভাতা হিসেবে তারা উভয়ে তাদের মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হিসেবে পাবেন। তারা উৎসব ভাতা পাবেন, বাংলা নববর্ষের ভাতা পাবেন, আবাসন সুবিধা পাবেন, যানবাহন সুবিধা পাবেন, টেলিফোন সুবিধা, কুক ভাতা, সিকিউরিটি ভাতা পাবেন। নিয়ামক ভাতা পাবেন আট হাজার টাকা করে। চিকিৎসা সুবিধা আগে যেভাবে আছে সেটাই থাকবে।
শুধু আইনের ভাষাটি ইংরেজি থেকে পরিবর্তন করে বাংলায় করা হয়েছে।
তাদের পদমর্যাদা ঠিক থাকছে কিনা প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'সেটির কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেটি মূল আইনে রয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতিরাও এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা বেতন
পান। বেতন আগের মতোই রয়েছে।'
এদিকে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি পদক নীতিমালা, ২০২৪' এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রতি দুই বছরে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক্ষেত্রে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। একটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের মূল্যমান এক লাখ মার্কিন ডলার ও আঠারো ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের পদক। একই সঙ্গে একটি সনদপত্রও দেওয়া হবে'
সাধারণত প্রতি দুই বছরে দেশি বা বিদেশি একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, '১৯৭৩ সালের ২৩ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। এটির ৫০ বছর পূর্তি আমরা গত বছর উদযাপন করেছি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শান্তি পুরস্কার তিনি প্রবর্তন করতে চান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে একটি নীতিমালা আমরা উপস্থাপন করেছি। মন্ত্রিসভা সেটি আজকে (সোমবার) অনুমোদন করেছে।'
তিনি বলেন, 'এই নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশ ও বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত বা বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে কয়েকটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পুরস্কার দেওয়া যাবে।'
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা, যুদ্ধ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ ও অবদান রাখা, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখা, টেকসই সামাজিক পরিবেশগত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন- পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ক্ষেত্রগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, 'পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে প্রস্তাব নেওয়া যাবে। কারা কারা প্রস্তাব করতে পারবে নীতিমালায় সেটিরও বর্ণনা দেওয়া আছে। একটি দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান বা সে দেশের সংসদ সদস্যরা প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। নোবেল বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি যত দূতাবাস রয়েছে সেই দূতাবাসের প্রধানরা বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন বা দূতাবাসের প্রধানরাও প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। জাতিসংঘের কোনো সংস্থাপ্রধানও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। তবে কোনো ব্যক্তি নিজে পুরস্কারের জন্য দাবি জানাতে পারবেন না।'
নীতিমালা অনুযায়ী একটি জুরি বোর্ড গঠন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'জুরিবোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নিরপেক্ষ ও খ্যাতিসম্পন্ন লোকদের দ্বারাই জুরিবোর্ড গঠন হবে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হবে। ২৩ মে বা কাছাকাছি সময়ে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।'
অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেবে। আগামী বছর (২০২৫) প্রথমবারের মতো এ পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মাহবুব হোসেন বলেন, 'মন্ত্রিসভা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নীতিমালা দিয়ে কাজটি যেন শুরু করা হয়। এটিকে (নীতিমালা) যেন পরবর্তীকালে আইনে রূপান্তর করা হয়। আইনের মধ্যে একটি তহবিল তৈরি করতে বলা হয়েছে, যে তহবিলে সরকার বা বাইরের যে কোনো ব্যক্তি অনুদান দিতে পারবেন। পরবর্তীকালে তহবিল থেকেই ব্যয়ভার নির্বাহ করা হবে। তার আগ পর্যন্ত সরকারই এ ব্যয়ভার বহন করবে।'