ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা নির্বাচনে যে ক'জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে, তাদের একজন নাছিমা মুকাই আলী। তার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য ঠিক থাকলেও নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় নানা তথ্যে গরমিল দেখা গেছে। বিশেষ করে আয়-ব্যয়ের হিসাবে বেশ গরমিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিসাবে অসঙ্গতি এত প্রকট ও অমিল যে, কীভাবে তার প্রার্থিতা বৈধ হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উপজেলার রাজনীতি সচেতন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আয়ের উৎস বা উৎসসমূহের ক্রমিক নং -৩ এ পেশা হিসেবে তিনি ব্যবসার কথা উলেস্নখ করেছেন। যেখানে উক্ত খাত হতে তার বাৎসরিক আয়ের ঘরে লেখা আছে প্রযোজ্য নয়, অর্থাৎ তার কোনো ধরনের ব্যবসা নেই।
অস্থাবর সম্পত্তির হিসাবের ক্রমিক নম্বর ৩ এ নিজ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দেখিয়েছেন দুই কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ৫৯২ টাকা।
ক্রমিক নম্বর ৫-এ নিজ নামে পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ৪৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া, বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি, লঞ্চ, স্টিমার, বিমান ও মোটর সাইকেল ইত্যাদির বিবরণীতে নিজ নামে দেখিয়েছেন এক কোটি ৮৭ লাখ টাকার গাড়ি।
ক্রমিক নম্বর ১০-এ অন্যান্য হিসাবে ইসলামি ব্যাংক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখায় এফডিআর করা দুই কোটি ৯০ লাখ ৫৯ হাজার ১৫২ টাকার কথা উলেস্নখ করা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তির হিসাবে ক্রমিক নম্বর ৪-এ নিজ নামে গুলশানে প্রায় চার হাজার বর্গফুটের আবাসিক ফ্ল্যাটের কথা বলা আছে। যার অর্ধেকাংশের মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এলাকার ভোটার ও সচেতন মহলের প্রশ্ন, যার কোনো ব্যবসা নেই। বাড়ি ভাড়া ছাড়া অন্য কোনো আয় নেই, তাহলে কীভাবে এত টাকা আর সম্পদের মালিক হলেন নাছিমা মুকাই আলী? আর হলফনামায় এত অমিল আর তথ্যগত অসঙ্গতি থাকার পরও কীভাবে বৈধ হলো তার মনোনয়নপত্র!
স্থানীয় ভোটাররা মনে করেন, এ ধরনের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হবে, নির্বাচনে বাড়বে টাকার খেলা। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার। অবিলম্বে নির্বাচনী হলফনামার তথ্য-উপাত্ত আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে নাছিমা মুকাই আলীর প্রার্থিতা বাতিলের ব্যাপারে কাযর্কর ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছে বিজয়নগর উপজেলার ভোটাররা।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি কোনো বক্তব্য দেই না, বক্তব্যের জন্য আমার লোক রয়েছে এবং সবকিছু যাচাই-বাচাই করে নির্বাচন কমিশন আমাকে বৈধতা দিয়েছে।'
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, 'উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এ ছাড়া অনলাইনে সবকিছু দেওয়াই আছে। তথ্যের গড়মিল সেখান থেকেই যাচাই করতে পারেন।'