বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পলিস্ন, প্রশ্ন রিজভীর

প্রকাশ | ২০ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রোববার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী -যাযাদি
অর্থ পাচারকারীদের তথ্য যাতে প্রকাশ্যে না আসে, সেজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'গতকাল (শনিবার) ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে, "সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকবে কেন?" বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পলিস্ন? বাংলাদেশ ব্যাংক কি একেবারে রেস্ট্রিক্টেড ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্টেও তো যদি বৈধ মানুষ যেতে চায়, তাদের তো কোনো অসুবিধা হয় না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান। এটা তো সবসময় অ্যাকাউন্টেবিলিটির মধ্যে থাকবে- এখানে সাংবাদিকরা তো যেতে পারে।' রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রিজভী। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনা বিভাগে রাখা রেজিস্ট্রার বইয়ে পরিচয় লিখে সই করে বিশেষ 'পাস' নিয়ে ভেতরে যেতে পারতেন সংবাদকর্মীরা। তবে গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে এই পাস ইসু্য করা বন্ধ রয়েছে গভর্নরের নির্দেশে। সাংবাদিকরা কোন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাংবাদিকদের। চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অলিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলতে। রিজভীর কথায়, 'সাংবাদিকরা তো দুবাইয়ে বাড়ি করেনি, সাংবাদিকরা কেউ মালয়েশিয়া-কানাডায় বাড়ি করেনি। ওবায়দুল সাহেব আপনি এসব কী কথা বলছেন? আপনাদের যে মাফিয়ারা দেশের জনগণের পকেট কেটে যে টাকাগুলো নিয়ে আজকে অর্থবিত্তের মালিক হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিত্তবিলাসে মগ্ন রয়েছেন, তাদের কথা যাতে দেশবাসী অথবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানতে না পারে, সেজন্য সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।' এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর কয়েকদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। তখন প্রতিবাদের মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 'আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই' \হদেশের অর্থনীতির চালচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে রিজভী বলেন, 'প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেওয়া হয়েছে- এখন তলানির দিকে আসছে। বৈদেশিক রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে সরকারের হাতে। যারা সচেতন জনগণ, বিজ্ঞ মানুষ- তারা বলছেন, 'তা নয়, আসলে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার রয়েছে'। এর মধ্যে বিদু্যৎ খাতের পাওনা পরিশোধ করতে ৪ বিলিয়ন ডলার চলে যাবে, ডলার তো তলানিতেই। মানে ক্ষুধায় জরাজীর্ণ কৃষ্ণ নারীর মুখে লিপিস্টিক দিলে যে অবস্থা হয়, শেখ হাসিনার উন্নয়ন হচ্ছে সেই রকম। এ ধরনের নারীকে সাজগোজ করলে যে রকম দৃশ্য লাগে, বাংলাদেশের অর্থনীতির দৃশ্য সেই রুগণ-ক্লিষ্ট নারীকে প্রসাধন চর্চিত করলে যেমন লাগবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি তেমনই রুগণ-ক্লিষ্ট প্রসাধন চর্চিত একটি অর্থনীতি।' বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, 'আমরা একটা শূন্য গহ্বরের ভেতরে যেন বসবাস করছি, আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কীসের উপর দাঁড়িয়ে আছি তা নিজেরাই বলতে পারব না। শুধু ব্যাংক থেকেই ১২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এটা আমার বক্তব্য না, এটা সিডিপির বক্তব্য।' রিজভী বলেন, 'আজকে ঋণখেলাপি এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলছে যে, এদের ৯০ শতাংশ হচ্ছে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোকেরা। ২০২২ সালে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। একটি দেশের উন্নয়ন মানে তো সব দিক থেকে উন্নতি, আমাদের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল, ব্যাংকগুলো ভায়াবেল, আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম উৎকর্ষতা লাভ করছি- এমনতো না। আমরা যে বিনিয়োগ করব বা যারা বিনিয়োগ করবে, সেই বিনিয়োগ করার জন্য যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে হয়, সেটা কেনার জন্য তো ডলার নেই।' 'দ্বিতীয় ধাপের ভোট বর্জন হবে' আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের ভোট প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, 'এই ভোট বর্জনের জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, আহ্বান জানাচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন। বর্জনের যে প্রস্তুতি, সেটা সমান তালে চলছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ভোট বর্জনের যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটাও ব্যাপকভাবে সাড়া পেয়েছে। মানুষ মনে করে এই ডামি সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাওয়া, সত্য ও ন্যায়ের বিরুদ্ধে যাওয়া।' রিজভী বলেন, 'আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, প্রথম ধাপের যে নির্বাচন- সেই নির্বাচনে আমাদের আহ্বানে যেমন জনগণ সাড়া দিয়েছে এবং ভোট বর্জন যেমন সফল হয়েছে; দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও (বর্জন) সফল হবে। এই দুর্বিনীত পীড়িত আওয়ামী লীগ সরকারকে মানুষ ঘৃর্ণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর প্রতিফলন ইতোমধ্যে হয়েছে, আবারো হবে।' অনুষ্ঠানে ফরিদপুরের দুই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। গত ১৮ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের একটি বিদ্যালয়ে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়। সেখানে টয়লেট নির্মাণে কর্মরত দুই শ্রমিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান মাশুক, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।