লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তরুণদের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'তরুণ সমাজ, যুব সমাজকে এটাই বলব যে কোনোরকম একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে, নিজেকে নিজের চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।'
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাত দিনব্যাপী ১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'স্টার্টআপ প্রোগ্রামে আমরা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। আলাদা বাজেট থাকছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আমরা যে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি ছেলেমেয়েদের সেটা গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে নারীদের আরও উদ্যোক্তা হতে হবে।'
রপ্তানি বাজারে হস্তশিল্পের চাহিদার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিদেশে হস্তশিল্পের আলাদা কদর আছে, সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।'
পণ্যবহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে, পাশাপাশি দেশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ বাজার যাতে সৃষ্টি হয়, সেজন্য দারিদ্র্য বিমোচন করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো।'
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশ ভৌগোলিক সীমারেখায় অত্যন্ত ছোট, কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের পরিবেশ এবং সব কিছু পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। শিল্প আমাদের গড়ে তুলতে হবে। শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবাইকে করতে হবে। সামান্য একটু কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ এবং নিজের সর্বনাশ করবেন না। আমরা চাই শিল্প গড়ে উঠুক। পাশাপাশি এদিকেও (পরিবেশ) দৃষ্টি দিতে হবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'শিল্প খাতকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে। এজন্য কোনো শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যেন শিল্পের বর্জ্য নদীতে না পড়ে। আমাদের পানিতে কোনোরকম দূষিত না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।'
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলার ফলে বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, 'বিদেশ থেকে যে পণ্যগুলো আমদানি করতে হয়, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। যার একটা প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। এটা শুধু করতে পারব যখন আমরা নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে পারব।'
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু ক্ষুদ্র, মাঝারি ও স্টার্টআপ উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট, অ্যাক্রেডিটেশন সনদসহ জাতীয় এসএমই পুরস্কার ২০২৩ হস্তান্তর করেন। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে উদ্যোক্তা স্বপ্না রানী সেন জাতীয় এসএমই পুরস্কার ২০২৩ জেতার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম ও এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ।
মেলা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত :এদিকে, এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এবারের মেলায় তিন শতাধিক উদ্যোক্তা অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তা। এসএমই মেলায় শতভাগ দেশীয় পণ্য প্রদর্শন করা হবে। মেলায় সাড়ে তিন শতাধিক কোম্পানি অংশ নিচ্ছে।
এবারের মেলায় পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি, ৭৫টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। পাশাপাশি পাটজাত পণ্যের ৪২টি প্রতিষ্ঠান, হস্তশিল্পের ৩৮টি প্রতিষ্ঠান, চামড়াজাত পণ্যের ৩২টি প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের ২৭টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে।
একই সঙ্গে ২৩টি হালকা প্রকৌশল পণ্যের, ১৪টি খাদ্যপণ্যের, ১৩টি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক (আইটি) পরিষেবা, ৫টি ভেষজ শিল্পপণ্যের ও ৫টি প্রতিষ্ঠান গয়নাপণ্যের প্রতিষ্ঠান মেলায় পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানের ১২টি এসএমই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তারা মেলায় অংশ নেবেন।
অন্যান্য খাতের মধ্যে পস্নাস্টিক পণ্যের ৪টি, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাতের ৩টি, আসবাব খাতের ৩টি ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৯টি স্টল থাকছে মেলায়। এছাড়া ৩০টি ব্যাংক, ১৫টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ক্লাব ও প্রায় ৫০টি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণকারীদের সেবা প্রদান করবে।