উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলায় আগামী ২১ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এসব উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এছাড়া পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলা শহর, গ্রামের হাট-বাজার, অলিগলিসহ পথ-প্রান্তর। আর তিন উপজেলার মধ্যে কালিহাতীতে হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও সিদ্দিকী পরিবার।
নির্বাচন ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রতিদিনই গণসংযোগের পাশাপাশি উঠান বৈঠক ও পথসভা করছেন। এসব প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একে-অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণের দায়ে ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রার্থীকে জরিমানাও গুনতে হয়েছে।
১৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঘাটাইল উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন (মোটর সাইকেল) ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মুহাম্মদ আরিফ হোসেন (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লোকমান হোসেনের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলবদ্ধ হয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে আরিফ হোসেনের পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থন
রয়েছে। ফলে এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজু (তালা), আতিকুর রহমান (চশমা), বিএনপি পরিবার থেকে আব্দুস ছালাম খান আওয়াল (টিউবওয়েল) নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সদ্য সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহীনা সুলতানা শিল্পী (সেলাই মেশিন), বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত উপজেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা জেসমিন পাপিয়া (প্রজাপতি) এবং সাবেক ইউপি সদস্য নাজমুন নাহার নাজমা (কলস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১৩ ইউনিয়ন ও দু'টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত কালিহাতী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সিদ্দিকী পরিবারের প্রার্থী লড়াইয়ে নেমেছেন। নির্বাচনী মাঠে দুই প্রার্থীর জম্পেস প্রচারণা চলছে। টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে আলোচিত সিদ্দিকী পরিবারের ভাইদের মধ্যে ছোটজন করটিয়া সা'দত কলেজের সাবেক ভিপি শামীম আল মনসুর (এসএএম) সিদ্দিকী ওরফে আজাদ সিদ্দিকী (আনারস) এবং আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোলস্নার (মোটর সাইকেল) নির্বাচনী লড়াই ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। এ উপজেলায় বাংড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাসমত আলী (দোয়াত কলম) চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী থাকলেও তার তেমন প্রভাব চোখে পড়ছে না।
আজাদ সিদ্দিকীর (আনারস) পক্ষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম বেশ কয়েকটি এলাকায় নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়ে ভাইয়ের জন্য ভোট চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী স্থানীয় সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিলেও ছোটভাই আজাদ সিদ্দিকীর প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা দাবি করছেন।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, সিদ্দিকী পরিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও সুসংহত করতে চাইছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সিদ্দিকী পরিবারের আধিপত্য রোধ করতে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে।
আজাদ সিদ্দিকী জানান, কালিহাতীর প্রতিটি অঞ্চলের ভোটারদের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। প্রতিটি এলাকার মানুষ তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। 'নিজের খেয়ে' সেস্নাগানে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হওয়ার আশা রাখেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোলস্না উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতারা তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। সাবেক সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনসার আলী, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আবু নাসেরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী আনোয়ার মোলস্নাকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন।
আনোয়ার হোসেন মোলস্না জানান, এ উপজেলায় দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে তিনি নির্বাচনে এসে এক পস্ন্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন। এটাও তার জন্য এক প্রকার বিজয় বলে তিনি মনে করেন। উপজেলার জনগণের কাছ থেকেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে আছেন। এজন্য ভোটাররা তাকেই নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দু'জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান (টিউবওয়েল), মো. আব্দুল্যাহ সরকার (চশমা), মো. আব্দুল বারেক (উড়োজাহাজ), মো. মাহমুদুল হাসান দীপুল (তালা) ও জমীর উদ্দিন আমেরী (বই)। সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রীনা পারভীন (প্রজাপতি) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ফাতেমা খাতুন বৃষ্টি (ফুটবল)।
ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ভূঞাপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও গত ৮ মে থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভূঞাপুর পৌর সভার সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম তালুকদার বিদু্যৎ (মোটর সাইকেল) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতা (আনারস) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অপর তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে নানা কৌশলে ভোট প্রার্থনা করছেন। তারা হচ্ছেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা লীগ নেত্রী মোছা. নার্গিস বেগম (দোয়াত কলম), আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফিরোজ চৌধুরী (হেলিকপ্টার) ও উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বাবলু (ঘোড়া)।
উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধারা মোছা. নার্গিস বেগমকে সমর্থন দেওয়ায় তিনি প্রায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। তারপরও তার প্রচারণা থেমে নেই। আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফিরোজ চৌধুরী হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে পৌরসভাসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বাবলু ঘোড়া প্রতীকে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় তার জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়লেও ভোটারদের কাছে তিনি প্রিয়পাত্র।
ভূঞাপুর উপজেলায় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে খোরশেদ আলম (টিয়া পাখি), ওয়াজেদ আলী খান (মাইক), আরিফুল হক (টিউবওয়েল) ও মনিরুল ইসলাম (তালা) এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলিফ নুর (প্রজাপতি), মঞ্জুয়ারা বেগম (পদ্মফুল), সাদিয়া আফরিন খানম (ফুটবল) ও হোসনে আরা বেবী (কলস) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।