মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

চট্টগ্রামের আড়তে আনারসের জমজমাট বেচাকেনা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে জমে উঠেছে বিভিন্ন জাতের আনারস বেচাকেনা -বাংলানিউজ

পাহাড়ি বিভিন্ন জাতের আনারসের বেচাকেনা জমে উঠেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন ট্রাকভর্তি করে আসছে আনারস। আড়তগুলোয় এখন পাহাড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উৎপাদিত হানিকুইনসহ বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় এসব আনারসে সয়লাব। পাইকারদের হাত হয়ে এসব আনারস ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের স্টেশন রোডের ফলমন্ডি ও ফিরিঙ্গিবাজার আড়তে চলছে আনারসের জমজমাট বিকিকিনি। চলমান তাপপ্রবাহে এই ফলের কদরও বেড়েছে। শুধু আড়ত নয়, সড়কের ওপরও জমেছে আনারসের স্তূপ। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয় আনারস। পাহাড়ি টিলা ভূমিতে চাষ করা হানিকুইন জাতের আনারস রসাল ও সুমিষ্ট হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে বেশি।

আড়তদাররা জানান, আনারসের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার জোগান ভালো আড়তে। তরমুজের পর খুচরা ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি আনারস নিয়ে যান। আর দাম হাতের নাগালে থাকায় সব শ্রেণির ভোক্তারাও কিনতে পারেন।

মেসার্স রূপসী বাংলা ফার্মের মালিক মাহবুবুর রহমান খান জানান, রাঙামাটির নানিয়ারচর থেকে একটি বড় ট্রাকে ১৮-১৯ হাজার আনারস আসে। ছোট ট্রাকে ৮-৯ হাজার আনারস আসে। প্রতিটি আনারসে গাড়িভাড়া, লাইন খরচ, চাঁদা মিলে তিন-চার টাকা পড়ে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় আমরা সীমিত লাভে আনারস বেচে দিই। আনারসের মৌসুম জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলবে।

মেসার্স মাটিরাঙা ফার্মের বিক্রয়কর্মী মো. নোমান বলেন, 'প্রতিদিনই প্রচুর আনারস আসছে। হলদে রং ধরলেই চাষিরা বাগান থেকে আনারস কেটে নেন। এসব আনারস ছোট হলেও বেশি মিষ্টি। চট্টগ্রামে এ ধরনের আনারসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।'

খুচরা বিক্রেতারা প্রতি শ' হিসেবে কেনে বস্তা, রিকশাভ্যানে করে আনারস নিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারিতে ছোট আনারস ৮ টাকা, একটু বড় সাইজের আনারস ১০-১২ টাকা, বড় আনারস ২০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, 'দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে মানুষের মৃতু্য হয়'-কথাটির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। আইসক্রিম কিংবা মিল্কশেকেও আনারসের সঙ্গে দুধ ব্যবহার করা হয় অহরহ। আনারসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। এ কারণে আনারস খেলে অনেকের অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে অনেকেই দুধ হজম করতে পারেন না। ফলে বদহজম বা পেট খারাপ হয়।

দুধে ল্যাকটোজেন নামে একটি উপাদান থাকে। অনেকের পেটে এই ল্যাকটোজেন সহ্য হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে 'ল্যাকটোজেন অসহনশীলতা' বলা হয়। এই সমস্যাগুলোও দুধ আর আনারস একসঙ্গে খাওয়ার জন্য তৈরি হয় না। সমস্যাগুলো দেখা দেয় আমাদের শারীরিক কিছু সমস্যা বা সীমাবদ্ধতার কারণে।

পুষ্টিবিদ হাসিনা আকতার জানান, আনারস দেহের গস্ন্যান্ড বা গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীত হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ। এটি আর্থ্রাইটিস উপশমে সহায়তা করে। তা ছাড়া কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।

ক্ষুদ্রান্ত্রের জীবাণু ধ্বংসে উপকারী আনারস। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ সকালের দুর্বলতা দূর করে। এটি জরায়ু, স্তন, ফুসফুস, অন্ত্র ও ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকা পালন করে। বার্ধক্যজনিত চোখের ত্রম্নটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী।

নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার আড়তে আনারস কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী আজিজুল করিম জানান, এখন নিয়মিতই আনারস বিক্রি করছেন তিনি। ছোট-বড় মিলিয়ে আনারস কেনেন। আনারস কাটার ঝামেলা রোধে তিনি নিজেই কেটে পরিষ্কার করে পলিথিনে ভরে ক্রেতাদের হাতে দেন।

পাইকারি মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন জানান, মৌসুমে প্রতি পিস ১০-১৫ টাকা কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ২০-২৫ টাকা দরে। আমরা এগুলো ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে