বজ্রপাতে একদিনে দেশের চার জেলায় ৮ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে মা-ছেলেসহ ৪ জন, টাঙ্গাইলে দুইভাই এবং গাজীপুর ও ময়মনসিংহে দুই নারী নিহত হন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। শনিবার সকালে এসব ঘটনা ঘটে।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, জেলার সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আলোকবালী এবং শহরতলীর হাজীপুর এলাকায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় মা-ছেলে চারজন নিহত এবং একজন গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন বলে সদর থানার ওসি তানভীর আহমেদ নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- আলোকবালী গ্রামের কামাল মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৩৫), তার ছেলে ইমন মিয়া (১০), ধান কাটা শ্রমিক রায়পুরার বাঘাইকান্দি এলাকার হাতেম আলীর ছেলে কাইয়ুম মিয়া (২০) এবং হাজীপুর এলাকার মোসলেহ উদ্দিন (৫০)।
নিহত সুফিয়া বেগমের আহত স্বামী কামাল মিয়া বলেন, 'স্ত্রী, সন্তান ও আরও একজন শ্রমিক নিয়ে সকাল থেকে মাঠে ধান কাটছিলাম। সকাল ১০টায় হঠাৎ প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় শরীরে পলিথিন দিয়ে ঢেকে বৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ বজ্রপাত হলে আমরা আহত হই।'
ওসি বলেন, স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সুফিয়া বেগম, ইমন মিয়া ও কাইয়ুম মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া একই সময় শহরতলীর হাজীপুর ইউনিয়নের চকপাড়ায় বজ্রপাতে মোসলেহউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। চারজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, জেলার কালিহাতী উপজেলার নোয়াবাড়ী গ্রামের মাঠে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃতু্য হয়েছে। নিহতরা হলেন- দিনাজপুরে বীরগঞ্জ উপজেলার চকদফর গ্রামের নুরু শেখের ছেলে আফজাল হোসেন (৫২) এবং একই গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে আমির হোসেন (৫০)। তারা সম্পর্কে খালাতো ভাই।
স্থানীয়দের বরাতে বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব আলী জানান, এক সপ্তাহ ধরে আফজাল ও আমির উপজেলার আউলিয়াবাদ বাজারে ঘর ভাড়া নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজ করছিলেন। শনিবার ভোরে নোয়াবাড়ী গ্রামে হযরত আলীর ক্ষেতে ওই দুজনসহ চার শ্রমিক ধান কাটছিলেন। এ সময় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। এক পর্যায়ে বজ্রপাতে আফজাল ও আমির ঘটনাস্থলেই মারা যান।
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নে বজ্রপাতে ফাতেমা আক্তার (৪৫) নামে এক নারীর মৃতু্য হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় গলদাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফাতেমা ওই গ্রামের মো. নূর হোসেনের স্ত্রী।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সকালে
পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাড়ির পাশের খলায় ধান শুকাচ্ছিলেন ফাতেমা খাতুন। এসময় খলার পাশে খড় আনতে যান তিনি। সে সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হচ্ছিল। আর সেই বজ্রপাতের আঘাতে ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হন তিনি। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ওই নারীকে সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়। পরে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তানসেন চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বজ্রপাতে তার শরীরের বাম পাশ ঝলসে গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, শনিবার সকালে বজ্রপাতে হাসিনা আক্তার (৩৫) নামে এক গৃহবধূ এবং ১টি গরু মারা গেছে। মৃত গৃহবধূ উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের ধোপাঘাট গ্রামের গ্রামপুলিশ কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, হাসিনা আক্তার শনিবার সকাল ৯টায় বৃষ্টি শুরু হলে বাড়ি উঠান থেকে গরু আনতে যান। এ সময় বজ্রপাত হলে তিনি আহত হন। তাকে উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে উপস্থিত ইউনিয়নের ডিত্রিম্নভূমি গ্রামের কাদির মন্ডলের একটি গাভী বাড়ির পাশের ক্ষেতে ঘাস খাওয়ার সময় বজ্রপাতে মারা যায়।
গফরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহিনূজ্জামান খান বজ্রপাতে মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছেন।