রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
কেরানীগঞ্জে কয়েক কোটি টাকার বিক্রির আশা

খামারে কোরবানির গরু বিক্রি শুরু

মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
  ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
কেরানীগঞ্জের একটি খামার থেকে কোরবানির গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এক ক্রেতা -যাযাদি

ঈদুল আজহার এখনো প্রায় এক মাস বাকি। ঈদের সময় দেশজুড়ে কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা থাকে ব্যাপক। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পশুর হাট বসলেও অনেকে খামার থেকে কোরবানিযোগ্য পশু কিনতে পছন্দ করেন। অনেক ক্রেতা আগেই এসব খামারে গিয়ে কোরবানির পশু পছন্দ করে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে বুকিং দিয়ে রাখেন। এরই মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন খামারে কেনাবেচা শুরু হয়েছে কোরবানির পশু। খামার থেকে ঈদের এক-দুই দিন আগে কোরবানির পশু পৌঁছে যাবে ক্রেতার কাছে। কেরানীগঞ্জের গরুর খামারগুলোয় এখন প্রতিদিনই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে।

খামারিরা বলছেন, কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে তাদের লাভের পরিমাণ কমবে। তবে কেউ লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করবে না। ক্রেতারা এখন কিনলে কিছুটা কমে কিনতে পারবেন। কোরবানির হাটে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে পশু বিক্রি করবেন না। সে ক্ষেত্রে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই কিনতে হবে।

দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সানি ডেইলি ফার্মের মালিক শামীম আহমেদ সানি বলেন, 'এবার ঈদে দামটা মনে হয় একটু বেশিই থাকবে। গত ঈদে যে গরু চার লাখে বিক্রি হয়েছে, এটা কিনতে এবার ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি লাগবে। তবে শেষ সময়ে দামটা আবার কমেও যেতে পারে। যদি শেষ সময়ে ভারত থেকে গরু আসা শুরু করে তাহলে হয়তো দাম অস্বাভাবিক কমে যাবে। সেরকম কিছু হলে দেশি ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ে যেতে পারেন।'

তিনি বলেন, 'গরুর খাবারের দাম এ বছর আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এই খামারে আমাদের গরু আছে ৩৫টা। সেগুলোর জন্য চার দিনের খাবার আমরা মিক্সড করেছি, যার খরচ প্রায় সত্তর হাজার টাকা। কাঁচা ঘাস, ধানের কুড়া, দুই জাতের ভুসি, ছোলা ও মসুরিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের মিশ্রণ থাকে এখানে।'

কয়েকটি খামার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা শেষ দিকের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। কর্মীরা কেউ গরুকে খাবার দিচ্ছেন, কেউবা গোসল করাচ্ছেন, আবার কেউ গরম থেকে বাঁচাতে পশুগুলোকে পাইপ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন। খামারগুলোতে অনেক ক্রেতা সরেজমিন পরিদর্শন করে দরদাম করছেন। কেউবা ওজনে কেনার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন।

শরীফ এগ্রোভেটে আসা রিয়াজ আহমেদ জানান, 'কোরবানির হাটে গিয়ে গরু কেনার ঝামেলা অনেক। তাই আগেভাগেই এখানে এসে গরু কিনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পছন্দ হলে গরু কিনে রেখে দেব। ফার্মের মালিকপক্ষ ঈদের আগে আমাদের গরু পৌঁছে দেবেন।'

একই খামারে কোরবানির পশু কিনতে আসা ঢাকার গুলশান এলাকার বাসিন্দা পিন্টু মুন্সি জানান, 'কোরবানির ঈদের এক মাস বাকি। তবে আমরা পছন্দের গরু আগেভাগে দেখে রাখার জন্য এসেছি। গরু পছন্দ হলেই বুকিং দিয়ে যাব।' শরীফ এগ্রোভেট দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রিয়াজুর রহমান বলেন, 'আমাদের খামারে ২ সহস্রাধিক ষাঁড় ছিল। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক গরু বিক্রি হয়ে গেছে। খামারে সর্বোচ্চ দশ লাখ টাকা দামের গরু আছে। আর সর্বনিম্ন আছে আড়াই লাখ টাকার গরু। প্রতি ঈদে কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয়, এবারও আশা করছি তেমন কিছুই হবে।'

মাশালস্নাহ অ্যাগ্রো খামারি রমিজ উদ্দিন জানান, 'গরুকে খৈল, ভুসি, সাইলেজ, ভুট্টা ও ঘাস খেতে দেওয়া হয়। কোনো ধরনের রাসায়নিক খাবার, হরমোন কিংবা ইনজেকশন দেওয়া হয় না। তবে গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে।' সামায়রা অ্যাগ্রো খামারের স্বত্বাধিকারী ফরহাদ আহমেদ বলেন, 'কোরবানির ঈদের জন্য আমার খামারে ৫০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে থেকে ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। পছন্দ হলে ওজন স্কেলে উঠিয়ে মেপে দেখে খামারেই গরু রেখে যাচ্ছেন। ঈদের আগ মুহূর্তে তারা গরু নিয়ে যাবেন। পশু খাদ্যের দাম বেড়েছে। তাই এ বছর প্রতি গরুতে ২০ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধি পাবে।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে কৃষক ছাড়াও বড় শিল্পপতিরা গরু, মহিষ ও ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন। কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক ছাড়াও বেশির ভাগ খামারে সারা বছর চলে পশু বেচাকেনা। এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৯ শতাধিক খামার রয়েছে। এর মধ্যে শরীফ অ্যাগ্রো, খাজা অ্যাগ্রো, আমানা ক্যাটেল, সজিব ক্যাটেল, ফিট অ্যান্ড ফ্রেশ, সামায়রা অ্যাগ্রো ও জারকা অ্যাগ্রো অন্যতম।

উপজেলার সুমন অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক সুমন আহমেদ জানান, 'এবার গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় পশুর দাম শতকরা ২০ ভাগ বাড়তে পারে। দেশি গরু ৯০ হাজার টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি গরু ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আমাদের প্রায় ২০ ভাগ গরু এরই মধ্যে বুকিং হয়েছে।'

কেরানীগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, উপজেলার ১২ ইউনিয়নে প্রায় ৯ শতাধিক খামারি রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাড়ে ছয়শ'টি খামার রেজিস্টার্ড ও বাকিগুলো মৌসুমি খামারি। এসব খামারে প্রায় ষাঁড়-বলদ ১২ হাজার ৬৪৭টি, মহিষ ১৮২টি, ছাগল ৫ হাজার ৫৭৬টি, ভেড়া ৪২১টি, দুম্বা ও গাড়ল প্রায় ৮০টি পালন করা হচ্ছে। এবারের কোরবানির ঈদে কেরানীগঞ্জে পশুর চাহিদা রয়েছে ৪৫/৫০ হাজার। যা কেরানীগঞ্জের চাহিদার চেয়ে অনেক কম পশু রয়েছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনসুর আহমেদ জানান, কেরানীগঞ্জে এবারের কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা ৪৫-৫০ হাজার। তবে উপজেলার পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে না। এ ঘাটতি পূরণের জন্য পশু আমদানি করতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল বলেন, কোরবানি উপলক্ষে সীমান্ত দিয়ে পশুর অনুপ্রবেশ যেন না ঘটে, সেজন্য কঠোর নজরদারি থাকবে। কেউ যদি চোখ ফাঁকি দিয়ে পশু আনতে চায়, তবে বিজিবি ব্যবস্থা নেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে