রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

এবার ফলন 'কম', লিচু চাষিদের মলিন মুখ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
এবার ফলন 'কম', লিচু চাষিদের মলিন মুখ

এ বছর টানা দাবদাহ ও শিলাবৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার লিচু বাগানগুলোতে উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে এবার আশানুরূপ মুনাফার দেখা মিলবে না বলে শঙ্কা বাগান মালিকদের।

সোনারগাঁ উপজেলার চিলারবাগ গ্রামের বাসিন্দা মাফিয়া আক্তারের বাড়ির সামনে রয়েছে সারিবদ্ধ কয়েকটি লিচু গাছ। একসময় কেবল বাড়ির লোকজনের খাওয়ার জন্য লিচুর গাছ লাগালেও এখন বাজারে বিক্রিও করেন মাফিয়া।

তবে এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ও তীব্র দাবদাহ আর শিলাবৃষ্টির কারণে লিচুর ফলন কম হয়েছে বলে জানান তিনি।

মাফিয়া বলেন, 'সোনারগাঁয়ের লিচু সবার আগে বাজারে আসে। এই কারণে লোকজনের কাছে এই লিচুর কদর বেশি। কিন্তু এবার তীব্র গরম আর শিলাবৃষ্টির কারণে অনেক লিচু ঝরে পড়েছে। আর যেগুলো গাছে তাও ঠিকমতো বড় হয়নি।'

একই ভাষ্য এ উপজেলার অন্য লিচু বাগান মালিকদের। বাগান মালিক ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার মাটি ও আবহাওয়া লিচু উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। যদিও কেবল সোনারগাঁ উপজেলায়ই লিচুর বাণিজ্যিক চাষ হয়। সাধারণত কদমি, পাতি ও চায়না-৩; এই তিন প্রজাতির লিচুর উৎপাদন হয় এসব বাগানে।

গত বছর ১০০ হেক্টরের মতো জমিতে লিচুর উৎপাদন করা হয়। এ বছর জমির পরিমাণ ৭ হেক্টরের মতো বেড়েছে বলে জানান সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা।

তিনি বলেন, 'এ বছর উপজেলার ১২টি গ্রামের অন্তত ১০৭ হেক্টর জমিতে ৭৮০টি বাগানে লিচুর বাণিজ্যিক চাষ করা হয়েছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হয়েছে। গত বছর বাগানগুলোতে ৭০০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর বাগানের সংখ্যা বাড়ায় উৎপাদন বেশি হবে বলে আশা ছিল। কিন্তু সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, অত্যধিক তাপমাত্রা ও শিলাবৃষ্টির কারণে এ বছরও উৎপাদন সেই ৭০০ মেট্রিক টনে ঠেকবে বলে ধারণা করছি।'

সরেজমিন গিয়ে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর, চিলারবাগ, উত্তর ষোলপাড়া, গোয়ালদী, গাবতলী গ্রামে সারি সারি লিচু বাগানের দেখা মেলে। অনেকে নিজের বাড়ির সামনে অল্প খালি জায়গায়ও লিচু গাছ লাগিয়েছেন। বেশির ভাগ বাগানে লিচু পাড়ার কাজ প্রায় শেষ।

এসব বাগানের অধিকাংশ মালিক তাদের বাগান মৌসুমভিত্তিক ভাড়া দেন। গাছে ফুল আসা থেকে ফল ধরার পর পরিচর্যা ও লিচু বাজারজাত করা পর্যন্ত সব কিছুই করেন ভাড়াটে চাষিরা। প্রায় ৪০ শতাংশ জমির একটি লিচু বাগান ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন শাহ আলম নামে একজন ব্যক্তি। বাগানটির দেখাশোনা করেন আওলাদ হোসেন। বাগানের পরিচর্যায় আরও ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানালেন আওলাদ।

তিনি বলেন, 'সোনারগাঁয়ের লিচু গাছে সবার আগে ফল আসে। এই কারণে বাজারে এর চাহিদা বেশি। কিন্তু এবার ফলন ভালো হয় নাই। বৃষ্টিটা সময়মতো হইলে এমনটা হইতো না। যখন বৃষ্টি হইছে তখন শিলা; এতে আরও বেশি ক্ষতি করছে।'

বাগানের লিচু পাড়া শুরু হয়েছে জানিয়ে আওলাদ আরও বলেন, 'লিচুগুলো বাজারে বিক্রি করলে অন্তত ছয় লাখ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু ফলন ভালো হলে মুনাফা আট লাখ টাকার মতো হতো।'

উত্তর শোলপাড়া এলাকায় লিচুর বাগান ভাড়া নিয়েছেন মো. হানিফ নামের একজন। তিনি বলেন, 'এইবার গাছে ভালো ফুল আসছিল। এইটা দেইখা অন্য বছর একটি বাগান লিজ নিলেও এবার তিনটা নিছি। যেই আশায় তিনটা বাগান লিজ নিছিলাম সেই আশা পূরণ হইব না। কারণ ফলন কম।'

উপজেলার বাগানগুলোতে আশানুরূপ ফলন না আসলেও লিচু বাজারজাত করতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না বলে জানান বাগান মালিক ও ভাড়াটে চাষিরা। বেশির ভাগ লিচু উপজেলার মোগরাপাড়া বাজারে ফলের আড়তে বিক্রি হয়, যা পরে ঢাকা ও আশপাশের ফলের বাজারে পৌঁছায়।

প্রতি হাজার লিচু ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এ বছর। তবে চায়না-৩ জাতের লিচুর দাম তুলনামূলক বেশি।

এছাড়া ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর এবং পানাম নগরে বেড়াতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীরাও লিচু কিনে নিয়ে যান বলে জানান বাগান মালিকরা।

এ অঞ্চলে প্রথম লিচুর চারা বারো ভূঁইয়াদের শাসনামলে নিয়ে এসেছিলেন পর্তুগিজ পর্যটকরা। তখন থেকেই এ অঞ্চলে লিচুর চাষ হলেও কয়েক বছরে এর বাণিজ্যিক চাষ বেড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে