'বাড়ছে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি'

প্রতি তিন বছরে দ্বিগুণ হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বর্তমান সময়ে সন্ত্রাসবাদের মূল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতি তিন বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে যার ফলে অনলাইনর্ যাডিকালাইজেশনের ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি জরিপে উঠে এসেছে ৮২ শতাংশ তরুণ অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ত হচ্ছে যা মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বৃহস্পতিবার দুপুরে 'জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকের ভূমিকা' শীর্ষক কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) উদ্যোগে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের মাল্টিপারপাস হলে দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেলেও বর্তমানে সন্ত্রাসের ভয়াবহতা বিস্তার লাভ করছে এবং বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র এর শিকার হচ্ছে। উন্নত-অনুন্নত, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য, মুসলিম-অমুসলিমসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও সন্ত্রাসের কবল থেকে রক্ষা পায়নি। তিনি বলেন, কালের পরিক্রমায় সন্ত্রাসের ধরন, প্রকৃতি ও মাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তৃতি, অর্থ সংগ্রহের বিভিন্ন মাধ্যম, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রাপ্তির সহজলভ্যতাসহ বহুবিধ কারণে সন্ত্রাসবাদ আক্ষরিক অর্থেই একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের অভু্যদয়ের পর সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম পরিচালিত হয় চরমপন্থি রাজনীতির নামে ও স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলমন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ উদার মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চক্রান্তের ফলে এখানেও বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসবাদের অশুভ ছায়ার বিস্তার ঘটেছে। পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ষাটের দশকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে ওঠা চরমপন্থি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশ সফলতা অর্জন করেছে। ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের সহায়ক পরিবেশকে মোকাবিলা, প্রতিরোধ, বিশেষ অভিযান পরিচালনাসহ সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা, সঠিক তদন্ত, মনিটরিং ও পুনর্বাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনবলের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি উদ্যোগ দ্বারা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে উদ্ভূত সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান, সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ, আন্তর্জাতিক মানদন্ডসমূহ, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন ও বৈশ্বিক সন্ত্রাস বিরোধী কৌশলগুলো অনুসরণ করে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির অনুসরণে বাংলাদেশ পুলিশসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থা নিরলস কাজ করছে। বর্তমানে জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জ বহুমুখী, যার উলেস্নখযোগ্য কয়েকটি বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন- প্রতি তিন বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে যার ফলে অনলাইন র?্যাডিকালাইজেশনের ঝুঁকি বাড়ছে, একটি জরিপে দেখা গেছে ৮২ শতাংশ তরুণ অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ত হচ্ছে যা মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, প্রায় ৬৬.৯৪ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ নিরীক্ষণ করা অসম্ভব, তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ হলেও তাদের সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতার অভাব, কারাগার ব্যবস্থাপনা যথাযথ না হওয়ায় সন্ত্রাসীদের সংস্পর্শে এসে উগ্রবাদী মতাদর্শে দীক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রকটভাবে বিদ্যমান, বিদেশ ফেরত বা দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত হওয়া, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা ও ক্ষোভকে পুঁজি করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা যেকোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ক্রমবর্ধিষ্ণু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদের দিকে পরিচালিত করতে পারে, পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক ও বাহ্যিক প্রভাবে নারীদের ও শিশু সন্তানসহ পুরো পরিবারের সন্ত্রাসবাদে জড়িত হওয়ার ঝুঁকি, লোন উলফ্‌ আক্রমণের ঝুঁকি ও অপরাধ-সন্ত্রাসবাদ ও রাজনীতি-সন্ত্রাসবাদ এর সংযোগ এবং ধনী পরিবার ও শিক্ষিত তরুণ/যুবকদের সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন বলেন, এটিইউর ডিআইজি (প্রশাসন) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর অতিরিক্ত আইজিপি ড. মলিস্নক ফখরুল ইসলাম।