দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে ১০ প্রকল্প

বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্পের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য এ বরাদ্দ অনুমোদন হয়। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে নতুন এডিপির আকার বেড়েছে মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা। অবশ্য আগের এডিপির আকার মার্চে সংশোধন করে তা দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। এবার ১০টি প্রকল্প সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে নতুন এডিপির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম। নতুন এডিপিতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের জন্য আরও প্রায় ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে মোট এডিপির আকার দাঁড়াবে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে মোট ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা আসবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ৬২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এডিপির অবশিষ্ট ৩৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ বা এক লাখ কোটি টাকার অর্থায়ন আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ ছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়বে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে ১০ মেগা প্রকল্প :আগামী অর্থবছরের এডিপিতে যে ১০টি প্রকল্প সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে, সেই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্প, পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং পদ্মা রেল ও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প। সংবাদ সম্মেলনে উলেস্নখ করা হয়, আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ থাকছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এক হাজার ১৩৩টি প্রকল্পের অনুকূলে এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি মেগা প্রকল্পের জন্য রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিসহ গত দুটি অর্থবছরে এডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকলেও নতুন অর্থবছরে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে- প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৪ (পিইডিপি-৪)। আগামী অর্থবছরে শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো এই গুচ্ছ কর্মসূচি শুরু হয়। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে আগামী এডিপিতে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির আওতায় খরচ হবে ৩৮ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭১ হাজার ৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ছয় হাজার পাঁচ কোটি টাকা। এর পরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। 'ঢাকা মাসর্ যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট : মেট্রোরেল লাইন-১' প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ তিন হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ তিন হাজার ৫৪৪ কোটি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া শীর্ষক প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৩৮৪ কোটি এবং পাঁচটি হাসপাতাল ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এডিপি অনুযায়ী, ৫৮টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদু্যৎ বিভাগের জন্য। স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯ হাজার ৩৭১ কোটি, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৯ হাজার ২২৭ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ৯০৩ কোটি, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ৫৮৮ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য চার হাজার ৪২৫ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য দুই হাজার ৯২৭ কোটি এবং সেতু বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্পের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর :অনুষ্ঠানে বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি পরিশ্রম করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান আছে সেগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া প্রতি তিন মাস পরপর এসব প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে একনেকে প্রতিবেদন দিতে হবে।' প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়াতে প্রকল্প পরিচালকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে যেন একই স্থানে কাজে যোগ দিতে পারেন এনইসি সভায় সে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'প্রকল্পের শুরুতেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সঠিকভাবে করতে হবে।' সেজন্য যেসব প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ করে তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, 'আমরা যে বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছি সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করেই নেওয়া হয়। আগের মতো সুতা লাগানো (শর্ত দেওয়া) ঋণ নেওয়া হয় না। ঋণ দিয়ে এটা করতে হবে ওটা করতে হবে- এসব থাকলে আমরা সে ঋণ নেই না।' আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, গত জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৫৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এনইসি বৈঠকে সব সচিবদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরে এডিপি বাস্তবায়ন হার বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।