শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

অপরাধের স্বর্গরাজ্য বাবুবাজার নৌ-ঘাট

মাদকসেবী-ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য
মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
  ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
অপরাধের স্বর্গরাজ্য বাবুবাজার নৌ-ঘাট

রাজধানীতে যে কয়েকটি সেতু রয়েছে এর মধ্যে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাবুবাজার সেতুর নিচে অবস্থিত নৌ-ঘাট ঘিরে রাত-দিন চলে নানা অপকর্ম। সেখানে সন্ধ্যা নামলেই আড়ালে চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। এ ছাড়া গভীর রাতে বাবুবাজার সেতুতে ভাসমান যৌনকর্মীদের প্রকাশ্যেই চলে দেহ ব্যবসা। বেড়ে যায় হিজড়াদের চলাচল। রয়েছে চুরি ছিনতাইকারীদের উৎপাত। ফলে সেতু বা নৌপথে আগত দর্শনার্থী ও পথচারীদের সন্ধ্যার পর ভয়ে চলাচল করতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে বাবুবাজার সেতুর তলদেশ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

এদিকে পুলিশ বলছে, মাদকসেবীদের এখান থেকে উচ্ছেদ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই।

জানা যায়, বাবুবাজার সেতু বা নৌ-ঘাট দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে। এর মধ্যে ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ-কেরানীগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার লোকজনও রয়েছেন। বাবুবাজার নৌ-ঘাট পার্শ্ববর্তী স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত রোগীদের যেমন অসুবিধা হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালসহ আশপাশের পরিবেশ।

বাবুবাজার সেতু ঘাটে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে মাদকসেবীদের মাদক সেবন করতে। বিশেষ করে সেতুর নিচে অনেকটা জায়গাজুড়ে ঝুপড়িঘরের মতো ভাসমান লোকজনের দখলে। মাদকসেবীদের ঝুপড়িঘরের কী নেই সেখানে। কাঁথা-বালিশ, তাস, মদের বোতল, বেস্নডসহ সবই আছে এই ঝুপড়ি ঘরে। রাত যত গভীর হয়, ততোই জমে ওঠে এই ঝুপড়িঘরের অন্দর মহলের আসর। অথচ এই পথ ধরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, বাদামতলি, নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তানসহ অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন।

ঘাটের মাঝি ও পথচারীরা বলছেন, রাত হলেই বাবুবাজার ওপর এবং নিচে বাড়ে ছিনতাই। নিরীহ মানুষের সর্বস্ব লুটে নিয়ে এ ঝুপড়িঘরে লুকায় অপরাধীরা। তারা বলছেন, এখানে প্রায়ই এই গ্রম্নপগুলোর মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। মারামারিও হয়। কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধ হয় না মাদক বিক্রি। গাঁজা হিরু, কালস্নুসহ বেশ কয়েকজনের নামের এই গ্রম্নপগুলো মাদক বিক্রি করে থাকে।

ঘাটে বসে থাকা শাহাদাত হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, মাদক বিক্রেতারা প্রতিদিন রাতে ঘাটে আসা যাত্রীদের মাদক বিক্রির জন্য বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। তাদের জন্য মাঝেমধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়।

ঢাকা সিটি কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী লুবনা মারিয়াম বলেন, বাবুবাজার নৌ-ঘাট এলাকায় যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। তা না হলে বাবুবাজার ঘাটের আনাচেকানাচে লোকজন মাদকসেবন করে কীভাবে? এসব পরিস্থিতি যখন চোখে পড়ে তখন সাধারণ লোকজনের মনে ভয় তো সৃষ্টি হয়ই। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে আসে, তাদেরও এসব কারণে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী আমির খান তমাল বলেন, বাবুবাজার সেতুর ওপর নিচে পুলিশের গাড়ি থাকলেও তারা ঘাটের নিচে যান না। এমনকি যারা মাদক বিক্রি করছে তাদের ধরেও না। কিন্তু যারা মাদকসেবনের জন্য কিনছেন তাদের ধরা হয়। আবার টাকার বিনিময়ে ছেড়েও দেওয়া হয়। বেশ কয়েকবার ঘটা করে পুলিশ অভিযান করলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি।

এ বিষয়ে ডিএমপি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান জানান, 'বাবুবাজার সেতু ঘাটে মাদকসেবীদের পাশাপাশি ছিনতাইকারীদের উৎপাতও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। যারা এসব অপকর্ম করে তারা তো পুলিশের সামনে করে না। লুকিয়ে, আড়ালে করে। সেখানে আমাদের পুলিশ সবসময় টহলে রয়েছে। এসব ঘটনা আগেও ছিল, এখনো আছে। কীভাবে এসব কাজ বন্ধ করা যায় সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।'

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, মাদক বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনলেই হবে না। তাদের পুনর্বাসনও করতে হবে। যাতে তারা এই ব্যবসার দিকে আর না ঝোঁকে। যারা মাদক সেবন করে তাদের পারিবারিক মূল্যবোধ সেখাতে হবে। পরিবার থেকেই এই বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। ছেলেমেয়েদের প্রতি আলাদা করে নজর রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে