৪ জেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় ১ জন নিহত, আহত ২৫

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ৪ জেলায় হামলা, সংঘর্ষ, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন নিহত এবং ২৫ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। ঝালকাঠিতে উঠান বৈঠক চলাকালে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন ২০ জন। এছাড়া রাজশাহীর দুর্গাপুর ও ঢাকার ধামরাইয়ে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গোপালগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ করে শোকর্ যালি করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া হাইস্কুলের সামনে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন-পরবর্তী আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরাজিত প্রার্থী লিয়াকত আলি ভূঁইয়া এবং বিজয়ী প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা পরাজিত প্রার্থীর এক সমর্থককে মারধরের জের ধরে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বিজয়ী প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার সমর্থক এবং তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। পরবর্তীতে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চন্দ্রদিঘলীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার সমর্থকরা গুলি চালালে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওসিকুর ভূঁইয়া নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। বুধবার দুপুরে নিহত যুবকের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ জেলা শহরে শোকর্ যালি বের করেন। উত্তেজিত জনতা শহরের চেচানিয়াকান্দি এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম ও পুলিশ সুপার আল বেলী আফিফা ওসিকুর ভূঁইয়ার হত্যাকারীদের দ্রম্নত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, 'পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওসিকুর ভূঁইয়া নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।' ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরতলীর কীর্ত্তিপাশা মোড়ের এক প্রার্থীর নির্বাচনী উঠান বৈঠকে প্রতিপক্ষের হামলায় দুই গণমাধ্যমকর্মীসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সুলতান হোসেন খান খানসহ ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) পাঠানো হয়। জানা গেছে, শহরতলীর কীর্ত্তিপাশা মোড়ের উঠান বৈঠকে বক্তব্য শুরু হলে অতর্কিত হামলা চালায় প্রতিপক্ষরা। এতে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সুলতান হোসেন খানসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। গুরুতর অবস্থায় মো. সুলতান হোসেন খানসহ অন্যদের উদ্ধার করে প্রথমে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুলতান হোসেন খানসহ কমপক্ষে ১০ জনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে কীর্ত্তিপাশা মোড়ে উঠান বৈঠকের আয়োজন করে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী মো. সুলতান হোসেন খান। আহত মো. সুলতান হোসেন খানের সমর্থক আহত কেএস জাহিদ বলেন, 'আনারস প্রতীকের প্রার্থী খান আরিফুর রহমানের সমর্থক জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী সুলতান হোসেন খানের সভায় হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর করে। সুলতান হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়।' তবে আনারস মার্কার প্রার্থী খান আরিফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'কীর্ত্তিপাশা মোড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সভায় কে বা কারা হামলা করেছে তা আমি কিছুই জানি না। তবে কীর্ত্তিপাশা মোড়ে দোয়াত-কলম মার্কার সমর্থকরা আমার আনারস মার্কার অফিস ভাঙচুর করেছে।' ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১ (সদর সার্কেল) মুহিতুল ইসলাম বলেন, 'প্রার্থী সুলতান হোসেন খানের ওপর হামলার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, বুধবার ভোরে উপজেলার পানানগর ইউনিয়নের তেবিলা এলাকার বটতলা নামক স্থানে চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফুজ্জামান শরিফের মোটর সাইকেল প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কে বা কারা ওই নির্বাচনী অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন জ্বলতে দেখে পার্শ্ববর্তী চা দোকানি শহিদুল ইসলাম চিৎকার করলে নৈশ প্রহরী জমির ও সোহাগ নামের দুই যুবক এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। আগুনের ঘটনায় ২৮টি পস্নাস্টিকের চেয়ার, ২টি কাঠের টেবিল, ১৫০ গজ সামিয়ানার কাপড় ও ২টি টিউবলাইট ভস্মীভূত হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, 'শুরু থেকেই একটি গোষ্ঠী আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ভন্ডুল করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করছে। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে আগামী ২১ মে সব চক্রান্তের দাঁতভাঙা জবাব দেবে।' দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক ও বিট ইনচার্জ বদিউজ্জামান জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত থাকতে পারে তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।' ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের সুঙ্গর গ্রামে আনারস প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্প ভাঙচুর ও তালা লাগিয়ে দেয় প্রতিপক্ষরা। স্থানীয়রা জানান, চরসুঙ্গর গ্রামে মোটর সাইকেল প্রতীকের সমর্থক আক্কাস আলী ও মেছের আলী দলবল নিয়ে আনারস প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে ক্যাম্পে তারা তালা ঝুলিয়ে দেয়। সন্ধ্যায় আনারস প্রতীকের কর্মীরা চরসুঙ্গর বাজার এলাকায় প্রচারণায় বের হলে মেছের আলী তার লোকজন নিয়ে আবারও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে মেছের আলী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল লতিফ জানান, পরাজয় বুঝতে পেরে মোটর সাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা আমার আনারস প্রতীকের কর্মীদের ওপর হামলা, ক্যাম্পে তালা দেওয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। মোটর সাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী খালেদ মাসুদ খান লাল্টু বলেন, 'আনারস মার্কার ক্যাম্প ভাঙচুর হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আর হামলার বিষয়ও আমি জানি না।' ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার খান মো. আব্দুলস্না আল মামুন বলেন, 'এসব ঘটনার লিখিত অভিযোগ পাইনি, পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, 'ক্যাম্পে তালা দেওয়ার ইনফরমেশন পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'