থেকে যাচ্ছে বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে লুপ লাইন নির্মাণে কারচুপি

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে লুপ লাইন নির্মাণে কারচুপির তথ্য পাওয়া গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম ব্যবহার করা হয়েছে পাথর। ফলে এই রেলপথে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) রিপোর্টে। ২০১৯ সালের ১৭ ও ১৮ জুন মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শন করে এই রিপোর্ট তৈরি করে আইএমইডি। যা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। রিপোর্টে উলেস্নখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার রেলপথ অনেক পুরনো। কিন্তু ২০১৫-১৮ সালে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় লুপ লাইনটির দৈর্ঘ্য কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মাণে লুপ লাইন তৈরিতে করা হয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম। প্রয়োজনের তুলনায় পাথর ব্যবহার করা হয়েছে কম। যা গোপন রাখা হয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। রিপোর্টে বলা হয়, প্রকল্পের অধীনে সর্বমোট নয়জন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে। ব্যালাস্ট বা রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পাথর ছাড়া অন্যান্য উপকরণ অর্থাৎ রেলপাত, অ্যান্টিভেন্ডাল কংক্রিট সিস্নপার, কাঠের সিস্নপা, ওয়েল্ডিং উপকরণ, রাবার প্যাড, রেল ক্লিপ বসানো হয়েছে। ষোলশহর-দোহাজারী রেলপথে ৫৫ হাজার ঘনমিটার ব্যালাস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ঘনমিটার। অন্যদিকে ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট সেকশনে ২৭ হাজার ঘনমিটারের স্থলে পাথর দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ঘনমিটার। পরিদর্শনকালে পুনর্বাসিত ট্র্যাক সেকশনে পাথরের পরিমাণ অত্যন্ত কম। আইএমইডির পর্যবেক্ষকরা পরিদর্শনকালে দেখতে পেয়েছেন, ট্র্যাক সেকশনে পাথর কম থাকায় রেললাইন অনেক স্থানে আঁকাবাঁকা ও সিস্নপার ফেটে গেছে। সার্বিকভাবে পুনর্বাসিত ট্র্যাক সেকশনে কাজের মান সন্তোষজনক পাওয়া যায়নি। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বলেন, পটিয়া স্টেশনের লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য কম হলেও ওয়ার্কিং টাইমটেবিলে বেশি দেখানো হয়েছে। পরিবহণ বিভাগ আমাদের কাছ থেকে হালনাগাদকৃত তথ্য সংগ্রহ না করে পুরনো তথ্য দিয়েছে। লুপ লাইন কমানোর সুযোগ না থাকলেও প্রকল্পের নতুন নকশায় প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা সেটি কেন অনুমোদন করেছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, 'ওই সময়ে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। যেসব কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন তারাই এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।' রেলের পরিবহণ বিভাগের কর্মকর্তাসহ ষোলশহর-দোহাজারী সেকশনের একাধিক স্টেশন মাস্টার বলেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নতুন করে নির্মাণ হলেও ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার রেলপথ পুরনো। ২০১৮ সালে শেষ হওয়া প্রকল্পের মাধ্যমে রেলপথটি সংস্কারকালে একটি পটিয়া স্টেশনের লুপ লাইন কমিয়ে ফেলা হয়েছে। একই ঘটনা অন্যত্র ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথকে ঝুঁকিহীন করতে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে পুরনো লাইনটি নতুন করে সংস্কারের বিকল্প নেই। রেলের নকশা ও নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথটি অচল অবস্থায় ছিল দীর্ঘদিন। রেলপথটি নির্মাণের সময়কার ওয়ার্কিং রুল ডায়াগ্রাম অনুযায়ী পটিয়া স্টেশনের লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬০০ ফুট বা ৪৮৭ দশমিক ৮৬ মিটার কিন্তু ২৬ এপ্রিলের ঘটনার পর লুপ লাইনটির দৈর্ঘ্য মেপে পাওয়া গেছে ৩৬৫ মিটার। সে অনুযায়ী লুপ লাইনটির দৈর্ঘ্য কমানো হয়েছে প্রায় ১২২ দশমিক ৮৬ মিটার। পরিবহণসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সন্দেহ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে মিলে অনিয়মের উদ্দেশ্যে সংস্কারের সময় অচল অবস্থায় থাকা রেলপথটির লুপ লাইন কমিয়ে এনেছে। নাম প্রকাশ না রাখার শর্তে অনিচ্ছুক রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর একাধিক প্রকৌশলী, স্টেশন মাস্টার ও ট্র্যাকসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, সংস্কার প্রকল্পের অধীনে ষোলশহর-চট্টগ্রাম দোহাজারী রেলপথে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। আবার এসব অনিয়মে স্বাক্ষরও করেছেন জিআইবিআরসহ (গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ রেলওয়ে) রেলের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ২৬ এপ্রিলের ঘটনার পর মাঠ পর্যায়ের রেলকর্মীদের দায়ী করে রেলপথ কমিয়ে অনিয়মের ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তাদের। রেলের সর্বশেষ প্রবর্তিত ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (৫৩) অনুযায়ী চট্টগ্রাম-কাঞ্চননগর সেকশন পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে পাঁচটি। প্রতিটি স্টেশনে একটি করে লুপ লাইন রয়েছে। এর মধ্যে ঝাউতলা স্টেশনের লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ৬০৯ দশমিক ৭৫ মিটার, জান আলী হাট স্টেশনের লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ৫১২ দশমিক ১৯ মিটার, ধলঘাট স্টেশনের লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ৩৭১ দশমিক ৯৫ মিটার, পটিয়া স্টেশনের লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ৪৮৭ দশমিক ৮৬ মিটার এবং কাঞ্চননগর স্টেশনের লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ৩৮৪ দশমিক ১৪ মিটার। রেলওয়ের ট্র্যাক ও পরিবহণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থাটিতে কোনো স্টেশনের লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ছোট করার কোনো নিয়ম নেই। প্রয়োজনে ব্যবহার না হলে সংস্কার করা হবে না, তবু ছোট করা যাবে না। কারণ ব্রিটিশ আমলে রেলপথ বসানোর পর দিন দিন রেলপথ ও রেলপ্রযুক্তি আধুনিক হচ্ছে। আগে ছোট রেলপথ থাকলেও এখন রেলের আকার বড় হয়েছে। এ কারণে একসময় দোহাজারী স্টেশনের একটি মাত্র লুপ লাইন ৩৯৬ দশমিক ৩৪ মিটার থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়েছে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ হওয়ায় দোহাজারী স্টেশনে এখন পাঁচটি লুপ লাইন করা হয়েছে। লুপ লাইনগুলোর দৈর্ঘ্য সর্বনিম্ন ৫৩৩ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৮৩৯ মিটার পর্যন্ত। এছাড়া সাতকানিয়া স্টেশনের সবচেয়ে বড় লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৮ মিটার, লোহাগাড়া স্টেশনে সবচেয়ে দীর্ঘ লুপ লাইন ৭৬৬, হারবাংয়ে ৭৬০, চকরিয়ায় ৭৫২, ডুলাহাজারায় ৭৯২, ইসলামাবাদে ৭৯২, রামুতে ৯২৪ এবং কক্সবাজার স্টেশনের সাতটি লুপ লাইনের মধ্যে সবচেয়ে বড় লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৪ মিটার। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, পটিয়া স্টেশনে ২৬ এপ্রিলের আগে তিনটি ট্রেনের ক্রসিং করানো হয়েছিল। নিয়মিতভাবে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে ১৬/৩২ থেকে ১৮/৩৬ লোডের ট্রেন চালানো হলেও পটিয়া স্টেশনের লুপ লাইন ছোট করার বিষয়টি নজরে আসে ২০/৪০ লোডের ট্রেন ক্রসিংয়ের সময়। প্রতি মিটার রেল ট্র্যাক বসাতে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য কমে আসায় সংস্কার প্রকল্পটিতে অনিয়ম হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রেলের নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রেলওয়ের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীসহ প্রকৌশল বিভাগ ও পরিবহণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্টের মধ্যে লুপ লাইন কমিয়ে করা নতুন নকশায় স্বাক্ষর করেছেন। যদিও পরিবহণ বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, এ বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। ফলে তাদের ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে (ডবিস্নউটিটি) প্রতি বছর লুপ লাইনের পুরনো দৈর্ঘ্যই ছাপানো হচ্ছে। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো কোনো স্টেশনেই লুপ লাইনের আকার ছোট করার কোনো যুক্তিই নেই, বরং ট্রেনের দৈর্ঘ্য ও কোচ সংখ্যা বৃদ্ধি বিবেচনায় অনেক স্টেশনেই এখন তা নতুন করে বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। পটিয়া স্টেশনের ছোট আকৃতির লুপ লাইন বেশি কোচ ও দৈর্ঘ্য সংবলিত ট্রেন ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। এতে রেলপথটিতে এখন বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রধান ট্রেন কন্ট্রোল অফিসের কর্মকর্তা ও স্টেশন মাস্টাররা বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনের ক্রসিং সম্পন্ন করেন ডবিস্নউটিটির তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে। ডবিস্নউটিটিতে লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য পরিবর্তনের তথ্য না থাকায় এরই মধ্যে এক দফা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে দেখা গেছে। গত ২৬ এপ্রিল কক্সবাজারমুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ও ঢাকামুখী কক্সবাজার এক্সপ্রেস একই সময়ে পটিয়া স্টেশনে ক্রসিংয়ের জন্য মুখোমুখি হয়। ওই সময়ে মূল লাইন দিয়ে ঢাকামুখী কক্সবাজার এক্সপ্রেস পটিয়া স্টেশন অতিক্রমের সিগন্যাল দেওয়া হয়। আর পর্যটক এক্সপ্রেসকে প্রবেশ করানো হয় স্টেশনের লুপ লাইনে কিন্তু লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য ট্রেনের তুলনায় ছোট হওয়ায় পেছনের তিনটি বগি মূল লাইনেই থেকে যায়। এ অবস্থায় ডেঞ্জার সিগন্যাল পাওয়ায় কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে হোম সিগন্যালে আটকে রাখে ট্রেনটির লোকো মাস্টার। সে সময় দুটি ট্রেনের ক্রসিং সম্পন্ন করতে না পারায় কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে প্রায় ৫৫ মিনিট সময় নিয়ে ব্যাক ইঞ্জিনে উল্টোপথে ট্রেন চালিয়ে দোহাজারী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগ পর্যন্ত উভয় ট্রেনের ক্রসিং করানো সম্ভব হয়নি। রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পটিয়া স্টেশনের লুপ লাইনসংক্রান্ত ঘটনার পর বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসার আনিসুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। কমিটি এরই মধ্যে তথ্য-উপাত্ত ও মাঠ পর্যায়ের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তদন্তের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তদন্ত কমিটির কোনো সদস্যই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, মূল রেলপথ থেকে একটি শাখা লাইন বের হয়ে তা কিছুদূর গিয়ে আবার মিলে গেলে সেটিকে বলা হয় লুপ লাইন। স্টেশন এলাকায় ক্রসিংয়ের সময় দুর্ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি ইঞ্জিন পরিবর্তনসহ নানা কাজে এ লাইন ব্যবহার হয়। বাংলাদেশে লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা না থাকলেও সারাদেশের বিভিন্ন বড় স্টেশনে পণ্যবাহী ট্রেন অপেক্ষমাণ রাখতে অন্তত একটি ৭৫০ মিটার (পৌনে এক কিলোমিটার) দৈর্ঘ্যের লুপ লাইন রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ট্রেনের সংখ্যা ও দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার কারণে কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনেও কমপক্ষে ৫০০ মিটার লুপ লাইন রাখা হচ্ছে। প্রতিবেশী ভারতেও প্রত্যেক স্টেশনে লুপ লাইন রাখা হয় অন্তত ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের। অথচ চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের পটিয়া রেলওয়ে স্টেশনে লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয়েছে ৩৬৫ মিটারে। যদিও রেলের পরিবহণ বিভাগের ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য দেওয়া আছে ৪৮৭ দশমিক ৮৬ মিটার। উলেস্নখ্য, ১৯৩১ সালে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেল যোগাযোগ শুরু হয়। নির্মাণের পর ১৯৮০-৮৬ সালের মধ্যে দোহাজারী সেকশনটিতে কাঠের সিস্নপার প্রতিস্থাপন করা হয়। রেলপথটি নাজুক অবস্থানে চলে যাওয়ায় ২০১০ সালে সেকশনটির উন্নয়নে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ষোলশহর-দোহাজারী সেকশন ছাড়াও ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট সেকশনের উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্পটির মূল্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৩ কোটি ৪৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২০১৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২৩২ কোটি ৩৬ লাখ ৬১ হাজার টাকার সংশোধিত ডিপিপি একনেকে পাস হয়। প্রথম সংশোধনীতে মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সাল করা হয়। পরে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এদিকে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজ করে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণের বিপরীতে খরচ হয় ২১৫ কোটি টাকা।