শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবাল জিম্বাবুয়ে

ক্রীড়া ডেস্ক
  ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবাল জিম্বাবুয়ে

একের পর এক ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পরও বোলারদের কল্যাণে কোনো রকমে জয়গুলো পাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টি২০তে এসে আর রক্ষা করা হয়নি। এমনকি টাইগার বোলাররাও পারলেন না ম্যাচ জেতাতে। তাইতো জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করা গেল না। উল্টো ৫ ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে সফরকারী জিম্বাবুয়ের কাছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারতে হলো বাংলাদেশকে।

সিরিজের বিচারে শেষ ম্যাচটার গুরুত্ব ততটা ছিল না। বাংলাদেশের সামনে ছিল প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশন, তবে বিশ্বকাপের আগে মূলত ব্যাটিংয়ে যে অস্বস্তি তা তাড়ানোর ব্যাপার ছিল বেশি। এবারও তা করতে পারল না নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের ফিফটিতে করা বাংলাদেশের মাঝারি পুঁজি ব্রায়ান বেনেট আর সিকান্দার রাজার ফিফটিতে অনায়াসে টপকে গেছে জিম্বাবুয়ে।

মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার পঞ্চম টি২০তে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের করা ১৫৭ রান তারা ৯ বল আগেই পেরিয়ে যায়। রান তাড়ায় দলের হয়ে ৪৬ বলে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন রাজা। ওপেন করতে নেমে ৪৯ বলে ৭০ করেন বেনেট। এই ম্যাচ জিম্বাবুয়ে জিতলেও পাঁচ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে ৪-১ ব্যবধানে।

পায়ে ক্র্যাম্প করায় ঠিকমতো দৌড়াতে পারছিলেন না সিকান্দার রাজা। কিন্তু হৃদয়ে ছিল সাহস, আর পেশিতে জোর। দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে জিতিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে উদযাপন করলেন জিম্বাবুয়ে

অধিনায়ক। মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকদের অভিনন্দনের জবাবও দিলেন তিনি ব্যাট ও হেলমেট উঁচিয়ে। তার দল যদিও হেরে গেছে প্রথম চার ম্যাচে, কিন্তু শেষ ম্যাচে এমন দাপুটে জয়ের পর এইটুকু উচ্ছ্বাস দেখানোই যায়!

বাংলাদেশ টানা চারটি ম্যাচ জিতলেও পারফরম্যান্সে পড়েনি প্রত্যাশার প্রতিফলন। ব্যাটে-বলে ঘাটতির জায়গা ছিল অনেক, জয়ের ধরনে ছিল অস্বস্তি। শেষ ম্যাচে তাই দলের কাছে চাওয়া ছিল পারফরম্যান্সের পূর্ণতা। কিন্তু হলো উল্টো। ব্যাটে-বলে যে দাপট আর বড় জয় প্রত্যাশিত ছিল বাংলাদেশের কাছে, ঠিক সেভাবেই জিতে গেল জিম্বাবুয়ে। সিরিজের শেষ ম্যাচে রাজার দল জয় পায় ৮ উইকেটর বড় ব্যবধানে।।

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর শুরুতেই অবশ্য সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে আউট হয়ে যান তাদিওয়ানাসে মারুমানি। ৭ বলে ১ রান করেন তিনি। যদিও জিম্বাবুয়ের দলীয় রান ছিল তখন ৩৮। এরপরই ব্রায়ান বেনেট এবং সিকান্দার রাজা মিলে ৭৫ রানের জুটি তৈরি করেন। এই জুটিই জিম্বাবুয়েকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসে।

১৫৮ রান তাড়ায় দারুণ শুরু আনেন বেনেট। ৪ রানে স্স্নিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচেছিলেন এই ডানহাতি। এরপর উড়তে থাকেন। তৃতীয় ওভারে শেখ মেহেদীকে টানা তিন বলে দুই ছক্কা আর চারে আনেন ১৬ রান। সাইফুদ্দিনের করা পরের ওভার থেকেও আসে ১৪ রান। ৪ ওভারে ৩৮ তুলে ফেলে সফরকারীরা। পঞ্চম ওভারে সাকিবের বলে টাডিওয়নশে মারুমানি স্টাম্পিং হলে প্রথম উইকেট পড়ে জিম্বাবুয়ের। সেটা বড় ধাক্কা হয়নি কারণ দারুণ জুটিতে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিতে থাকেব বেনেট-রাজা। রাজা থিতু হতে সময় নিয়েছেন, বেনেট ধরে রেখেছেন গতি।

একজন পেসার কম নিয়ে খেলায় বাংলাদেশও তাদের উপর চাপ বাড়াতে পারেনি। টি২০তে নিজের প্রথম ফিফটির পরও বেনেট ছুটতে থাকেন। তার ঝাঁজে স্বাগতিক দলের সম্ভাবনা ক্রমশ মিইয়ে যায়। ৪৯ বলে ৫টি করে ছক্কা-চারে ৭০ করে বেনেট যখন সাইফুদ্দিনকে ক্যাচ দেন ততক্ষণে ম্যাঠ মুঠোয় জিম্বাবুয়ের। অধিনায়ক রাজা পরে জোনাথন ক্যাম্পবেলকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন অনেকটা তুড়ি মেরে। পুরো সিরিজে ব্যর্থ জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক শেষ ম্যাচে ৬ চার, ৪ ছক্কায় করেন ৭২।

সকালে টস হেরে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা বাজে। শুরুটা ছিল বিবর্ণ। দলীয় ১৫ রানেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান তখন সাজঘরে। আগের ম্যাচে ঝলমলে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম এবার থিতুই হতে পারলেন না। ৫ বল খেলে ২ রান করে ক্যাচ দেন বেস্নসিং মুজারাবানির বলে। সৌম্য সরকার ব্রায়ান বেনেটকে ছক্কায় উড়িয়ে শুরু করলেও টিকতে পারেননি। বেনেটের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭ বলে ৭ রান করে।

চট্টগ্রামে প্রথম তিন ম্যাচে দলকে জেতানোয় বড় ভূমিকা রাখা তাওহিদ হৃদয় ঢাকায় এসে নিষ্প্রভ। আগের দিনের মতন এবারও রান পাননি। এবার বেনেটকে কাত করতে গিয়ে ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। বিরূপ পরিস্থিতিতে চারে নেমে টানা তিন চারে শুরু করেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। নড়বড়ে শুরু পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে জমে উঠে তার জুটি। শান্ত সাবলীল না থাকলেও মাহমুদউলস্নাহর ব্যাট ছিল সচল। দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তিনি। একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে শেকল ছেড়ে বের হন শান্ত।

তবে এদিনও বড় রান পাওয়া হয়নি তার। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে এক ছক্কা মেরে পরে ক্যাচ দেন ডিপ মিড উইকেটে। ২৮ বলে থামেন ৩৬ করে। মাহমুদউলস্নাহর সঙ্গে পরে যোগ দিয়ে সাকিব আল হাসান যোগ করেন ৩৯ রান। তবে তাদের জুটি ছিল তুলনামূলক মন্থর। ৩৯ রান আনতে তারা লাগান ৩৩ বল। ১৭ বলে ২১ করে লুক জঙ্গুইর শিকার সাকিব। এক পর্যায়ে ২০ বলে ৩১ থেকে মাহমুদউলস্নাহ ৪৪ বলে থামেন ৫৪ করে।

শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের আলগা বোলিংয়ের সুবিধা তোলেন জাকের আলী। তার ১১ বলে ২৪ রানের ইনিংসে দেড়শ পার করে বাংলাদেশ। এই রান যে এখানে যথেষ্ট ছিল না তা বুঝিয়ে দিলেন বেনেট-রাজারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৭/৬ (তানজিদ ২, সৌম্য ৭, শান্ত ৩৬, হৃদয় ১, মাহমুদউলস্নাহ ৫৪, সাকিব ২১, জাকের ২৪*, সাইফউদ্দিন ৬*; রাজা ০/২৬, মুজারাবানি ২/২২, বেনেট ২/২০, আকরাম ০/২০, মাসাকাদজা ১/২৩, জঙ্গুয়ে ১/৩৩, উইলিয়ামস ০/১২)।

জিম্বাবুয়ে: ১৮.৩ ওভারে ১৫৮/২ (বেনেট ৭০, মারুমানি ১, রাজা ৭২*, ক্যাম্পবেল ৮*; মেহেদী ০/৩০, সাকিব ১/৯, সাইফউদ্দিন ১/৫৫, মুস্তাফিজ ০/১৮, রিশাদ ০/৩৩, সৌম্য ০/১০)।

ফল: জিম্বাবুয়ে ৮ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে জয়ী।

স্যাচসেরা : ব্রায়ান বেনেট।

সিরিজসেরা :তাসকিন আহমেদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে