শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

আমাদের ঘাড়ে 'দৈত্য' বসে গেছে

জিএম কাদের
যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
আমাদের ঘাড়ে 'দৈত্য' বসে গেছে

দেশে এখন জনগণের কথা বলার মতো 'সুযোগও নেই' বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

ক্ষমতাসীন সরকারকে 'রূপকথার দৈত্যের' সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেছেন, 'জনগণের ইচ্ছায় সরকার পরিবর্তন হয় না। আজ প্রজাদের মালিকানা ছিনতাই হয়ে গেছে। সরকারের ইচ্ছা-খুশিমতো জনগণকে চলতে হয়।

'ছোটবেলায় রূপকথার গল্প পড়তাম, দৈত্যের গল্প। সরকার সেই রূপকথার গল্পের মতো দৈত্য হয়ে গেছে। দেশ তাদের, তাই মানুষের কোনো কথা বলার মতো কিছু নেই, কোনো সুযোগ নেই। শক্তভাবে দৈত্য আমাদের ঘাড়ে বসে গেছে।'

শনিবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আমলাদের

সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'সরকার যেভাবে গেঁড়ে বসেছে, সে থাকবেই। অনেক আমলা জনগণের পক্ষে যেতে চাচ্ছেন না। শক্ত অবস্থান নিতে পারছেন না। যেভাবে চলছে চলুক, এটাই ভাবছেন তারা। তারা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নীরবে বসে আছেন। তারা ভেবে নেবেন- এটা ক্ষণস্থায়ী।'

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের ভোগান্তির পরিস্থিতিতে দেশে একটা শ্রেণি বিশাল সম্পদের মালিক হচ্ছে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'দেশের বেশিরভাগ মানুষ যে আয় করছে, সেই আয়ে সংসার চলছে না। খরচ দিনদিন বাড়ছেই। সরকার বিভিন্নভাবে আমদানি সংকুচিত করেছে, তাতে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। আর আস্তে আস্তে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হচ্ছে, সেই মন্দায় দেশ ভেসে যাচ্ছে।

'দেশের এই করুণ অবস্থায়ও একটা শ্রেণি বিশাল অর্থের মালিক হচ্ছে। ইউরোপিয়ান স্টাইলে জীবন-যাপন করছে। আরেক শ্রেণির মানুষ নিজের চিকিৎসার ওষুধ পর্যন্ত কিনতে পারছে না। এর বৈষম্য দিনদিন বেড়েই চলছে। আর জনগণকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। মানুষ ভোট দিতে যায় না। জনগণ বলে এই ভোট দিলেই কী আর হবে।'

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে বৈষম্যের প্রতিবাদ করা হয়েছিল, সেই বৈষম্য নতুন করে তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'ধনী-গরিবের মধ্যে বিরাট বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহীদ মিনারে লেখা দরকার 'বৈষম্য নিপাত যাক, যারা বৈষম্য তৈরি করছে তারাও নিপাত যাক'।

'এখনকার মতো বৈষম্য দেশে কখনো হয় নাই। নোবেল প্রাইজের মতো যদি কোনো পুরস্কার বৈষম্য সৃষ্টির জন্য থাকত, তবে বর্তমান সরকার সেই প্রাইজ পেত।'

দেশে গ্যাস ও বিদু্যতের পরিস্থিতি 'খুব নড়বড়ে' মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, 'বিদু্যতে ১০ হাজার বাড়িয়ে ২৭ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এই ক্যাপাসিটির চার্জ ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এগুলো কাজে আসছে না। মানুষের কোনো সুবিধা হয়নি।

'আর আমাদের যদি প্রাকৃতিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা হতো, তাহলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থাকত না। এখন যে কোনো সময় গ্যাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এগুলো দূরদর্শিতার অভাব এবং দৃষ্টি আরোপ করার বিষয়। দেশে গ্যাস ও বিদু্যৎ দুইটাই খুব নড়বড়ে পরিস্থিতিতে আছে।'

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমরা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে চাই না। আমরা সুষ্ঠুভাবে রাজনীতি করতে চাই। দালাল হিসেবে বেঁচে থাকবেন না। তাই বলছি রাজনীতিটা ভালোভাবে করুন। সামনে নির্বাচনের মাধ্যমেই নেতৃত্ব ঠিক করা হবে। আমি যুক্তিসঙ্গতভাবে কাজ করতে চাই।'

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, জিএম কাদেরের উপদেষ্টা মো. খলিল উর রহমান খলিল ও জাহিদ হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সামছুল হক মতবিনিময় সভায় ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে