শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

হায়দার আকবর খান আর নেই

যাযাদি ডেস্ক
  ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
হায়দার আকবর খান রনো

দেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও তাত্ত্বিক লেখক, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে চলে গেলেন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা্‌য় শুক্রবার রাত ২টার দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'রনো ভাই আর নেই। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। গত ৬ মে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানেই মধ্যরাতে মারা যান তিনি।'

সিপিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা

১১টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রবীণ এই রাজনীতিকের মরদেহ সিপিবি কার্যালয়ে রাখা হবে। শোভাযাত্রা করে মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দেশবাসীর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। বেলা ১টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে তার জানাজা শেষে বনানীতে মা ও বাবার কবরের পাশে তার দাফন সম্পন্ন হবে। তার স্বজনরা দেশে না ফেরা পর্যন্ত এই প্রবীণ রাজনীতিকের মরদেহ রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে।

প্রখ্যাত এই রাজনীতিকের ভাইয়ের মেয়ে অনন্যা লাবণী বলেন, 'চাচার (হায়দার আকবর খান রনো) ইচ্ছা অনুসারে তার চোখের কর্নিয়া সন্ধানীতে দান করা হয়েছে।'

প্রবীণ এই রাজনীতিকের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে গত ৭ মে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছিলেন, 'রাজনীতিবিদ ও লেখক হায়দার আকবর খান রনোর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বাড়ছে। তাকে এইচডিইউতে রেখে বিশেষ পদ্ধতিতে অক্সিজেনের জোগান দেওয়া হচ্ছে।'

১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় হায়দার আকবর খান রনো জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হায়দার আকবর খান রনো ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন। এছাড়া নব্বইয়ের দশকের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনসহ এরশাদ পতনের গণঅভু্যত্থানের সংগঠক ছিলেন।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকলেও ২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে তিনি দলটি ছেড়ে সিপিবিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তাকে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর তিনি সিপিবির উপদেষ্টা হন।

হায়দার আকবর খান রনো ১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে। তিনি একাধিক বইয়ের লেখক।

এদিকে দেশের প্রবীণ এই রাজনীতিকের মৃতু্যতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বিএনপির মহাসচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের পৃথক বার্তায় গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

শনিবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়ার সই করা এক বিবৃতিতে মরহুম হায়দার আকবর খান রনোর আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন এবং গুণগ্রাহীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান ওবায়দুল কাদের।

বিএনপির মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, 'হায়দার আকবর খান রনোর মৃতু্য সংবাদে তার পরিবার-পরিজনদের মতো আমিও গভীরভাবে সমব্যথী। মাক্সর্বাদী তাত্ত্বিক হায়দার আকবর খান রনো পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন ত্যাগী ও সত্যিকারের একজন নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তিনি দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। পৃথিবী থেকে তার এই চির বিদায়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হলো।'

তিনি বলেন, 'হায়দার আকবর খান রনো ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে স্বৈরশাহীর স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। আমৃতু্য এই গুণী রাজনীতিবিদ গণমানুষের মুক্তির পক্ষে নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছেন। বর্তমান এই দুঃসময়ে তার মতো রাজনীতিকের মৃতু্য নিঃসন্দেহে গভীর দুঃখের ও বেদনার। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, গুণগ্রাহী, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।'

অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক শোকবার্তায় প্রয়াতের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করেছেন। একই সঙ্গে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

শোকবার্তায় তিনি বলেন, 'হায়দার আকবর খান রনো ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। গণমানুষের দাবি আদায়ে সোচ্চার ছিলেন আজীবন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃতু্যতে দেশের রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহসাই পূরণ হওয়ার নয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে