সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, ৪৬তম বিসিএসের কয়েকটি প্রশ্ন ভুল ছিল, সে জন্য কারও নম্বর কাটা যাবে না বা কেউ বঞ্চিত হবেন না। শতভাগ নিশ্চিত হয়ে ফল প্রকাশ করা হবে। বুধবার সকালে তিনি এসব কথা বলেন।
চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা প্রশ্নকর্তা ও মডারেশনের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের ডেকেছিলাম। কিছু প্রশ্নে ভুল পাওয়া গেছে। তবে পরীক্ষার্থীদের মনে হয়েছে ভুল, কিন্তু আমরা পেয়েছি সেটি ভুল না। তবে ভুল প্রশ্নের জন্য কোনো নম্বর কাটা যাবে না। পিএসসি কাউকে বঞ্চিত করবে না। সেভাবেই খাতা দেখা হচ্ছে। শতভাগ নিশ্চিত হয়েই ফল প্রকাশ করা হবে।'
গত মাসে অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের ভুল ও অসঙ্গতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কিছু পরীক্ষার্থী। তারা এই ভুল পর্যালোচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন পিএসসির কাছে। আর পিএসসি বলছে, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, 'প্রশ্নে ভুলের দায় আমাদের। কিন্তু এই প্রশ্নে কী আছে, সেটা আমরা পরীক্ষা হওয়ার আগে দেখতে পারি না। ছয় সেট প্রশ্ন হয়, প্রশ্নকর্তা ও মডারেটর জানেন না কোন সেট আসবে। এক সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা হওয়ার পর অন্য সেট আমরা নষ্ট করে ফেলি।'
মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, 'প্রশ্নকর্তা ও মডারেশনের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের ডেকেছিলাম আমরা। সবাই সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের অনুরোধ করেছি, শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে প্রশ্ন জমা দেবেন না। প্রশ্নে ত্রম্নটি থাকলে পিএসসি বিব্রত হয়। আর যাতে এমন না হয়, সে অনুরোধ রেখেছি তাদের প্রতি।'
চাকরিপ্রার্থীরা জানান, ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কিছু প্রশ্ন ভুল ও উত্তর না থাকা এবং দ্বৈত উত্তর থাকায় পরীক্ষার হলে তাদের অনেক চাপে পড়তে হয়েছে। তাদের দৃষ্টিতে এ রকম ১০টি প্রশ্নে ভুল দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেট-৪ (কপোতাক্ষ) এ। এর মধ্যে গণিতে ৩৯, ৫৮ ও ৬০ নম্বর প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই এবং ইংরেজির ১৩৫, ১৫৩ ও ১৫৪ নম্বর প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর নেই। এ ছাড়া ইংরেজির ১৩১ ও ১৪৯ নম্বর এবং বাংলার ১৭৯ নম্বর প্রশ্নের দ্বৈত উত্তর আছে। আবার, বাংলার ১৮১ নম্বর প্রশ্নের অপশনের বানান ভুল। তাই বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (বিপিএসসি) যথাযথ ব্যক্তিরা উলিস্নখিত ১০টি প্রশ্নসহ পুরো প্রশ্নের ২০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন ও উত্তর পুনরায় যাচাই করে দেখলে এবং এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিলে পরীক্ষার্থীরা প্রশ্ন ভুলের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত হবে। যেহেতু প্রশ্নে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক ভুল ছিল, সেটা তাদের একদিকে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে যথেষ্ট সময়ের অপচয় করেছে, যার কারণে তারা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে যাদের এটাই শেষ বিসিএস, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই অন্তত তাদের কথা বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
৪৬তম বিসিএসের প্রশ্নে ভুলের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে ও পিএসসি কি করছে-এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাস গত ৫ মে বলেন, 'আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।'
প্রশ্নে ভুল থাকলে পিএসসি আসলে কোন পন্থা অবলম্বন করে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাস বলেন, 'যদি অভিযোগ আসে, আমরা সেটি খতিয়ে দেখব। সাধারণত এ ধরনের অভিযোগ এলে আমরা সেটি আমলে নিয়ে প্রাথমিকভাবে যাচাই করি। এরপর একটি বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে তা যাচাই করাই। যদি ভুল পাই, তাহলে সেই প্রশ্নের নম্বর কাটা হয় না। সবাই নম্বর পান। এবারও যদি এমন হয়, তাহলে সবাইকে ভুল প্রশ্নের জন্য নম্বর দেওয়া হবে। সেটিতে যে অপশনেই টিক মার্ক দিক না কেন, তা দেখা হয় না। কেউ বঞ্চিত হন না। সবাই মার্কস পান।'
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) আয়োজিত এই পরীক্ষায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন কেন্দ্রে চাকরিপ্রার্থীরা অংশ নেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২০০ নম্বরের এই পরীক্ষা হয়।
৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৫৬১ প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। পরীক্ষা দেননি ৮৩ হাজার ৪২৫ জন। উপস্থিতির হার ৭৫। সরকারি কর্ম কমিশন পিএসসি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিসিএসে তিন হাজার ১৪০টি পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এ ছাড়া সহকারী সার্জন এক হাজার ৬৮২ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন নেওয়া হবে। এরপর সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। বিভিন্ন বিষয়ে এই ক্যাডার থেকে বিসিএস শিক্ষায় ৫২০ জন নেওয়া হবে।