সিঙ্গাপুর ও কাতার থেকে তিন কার্গো তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের গানভর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে দুই কার্গো এবং কাতারের কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি থেকে এক কার্গো এলএনজি কেনা হবে। এতে মোট খরচ হবে এক হাজার ৩৫০ কোটি ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৭৪০ টাকা। অন্যদিকে, ৪৬৮ কোটি টাকার তেল-ডাল ও ২৮২ কোটি টাকার ইউরিয়া কিনতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই ডিএসসিসি মশার ওষুধ কিনতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এসব পণ্য ক্রয় করতে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, 'বিদু্যৎ ও জ্বালানির দ্রম্নত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধনী ২০২১)' এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রত্যাশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের গানভর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৪৬২২ মার্কিন ডলার হিসাবে মোট ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ৪৫২ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৭০ টাকা ব্যয় হবে। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের আগের ক্রয়মূল্য ছিল ১০ দশমিক ৮৬৩৭ মার্কিন ডলার।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অন্য এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের একই প্রতিষ্ঠান থেকে আরও এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৪৬২২ মার্কিন ডলার হিসাবে মোট ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ৪৫২ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৭০ টাকা ব্যয় হবে।
অন্যদিকে কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৩০ মার্কিট ডলার হিসাবে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মোট ব্যয় হবে ৪৪৫ কোটি ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা। এলএনজি আমদানির এ প্রস্তাবটিও আসে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে।
২৮২ কোটি টাকার ইউরিয়া
সার কিনবে সরকার
রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও সৌদি আরব থেকে ৯০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
\হবৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগেস্নাব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কাছ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ২৮৪.১৭ মার্কিন ডলার। যা আগে ছিল ৩২৮.৬৭ মার্কিন ডলার।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিআইসির জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতারের কাতার কেমিক্যাল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (মুনতাজাত) থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৩ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ২৮২.৫০ মার্কিন ডলার। যা আগে ছিল ৩৩০.৮৩ মার্কিন ডলার।
পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে টেবিলে আরও একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। সেটিও অনুমোদ দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এই প্রস্তাবের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। এতে খরচ হবে ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ২৮৮.৩৩ মার্কিন ডলার। যা আগে ছিল ৩৪৭.৫০ মার্কিন ডলার।
টিসিবির জন্য কেনা হচ্ছে ৪৬৮
কোটি টাকার তেল-ডাল
অন্যদিকে, সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্য বিক্রির জন্য মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও রাইস ব্রান তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ২২ হাজার টন মসুর ডাল, ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং ৪০ লাখ লিটার রাইস ব্রাণ তেল। এতে ব্যয় হবে ৪৬৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, টিসিবর জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে নাবিল নাবা ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০৩ টাকা ২৪ পয়সা। যা আগে ছিল ১০৩ টাকা ৭৫ পয়সা।
আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ১০ হাজার টন মুসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০৩ টাকা ৭৫ পয়সা। এছাড়াও ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর মেসার্স সালমান খুরশীদের কাছ থেকে ৩ হাজার টন এবং খুলনার শেখ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে ৩ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রতি কেজি ডালের দাম পড়বে ১০১ টাকা ৪০ পয়সা।
সচিব আরও জানান, টিসিবির সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস থেকে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫২ টাকা।
এছাড়া মজুমদার প্রোডাক্টস এবং মজুমদার ব্রাণ অয়েল মিলস লিমিটেডের কাছ থেকে ৪০ লাখ লিটার রাইস ব্রাণ তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতি লিটার রাইস ব্রান তেলের দাম পড়বে ১৪৮ টাকা ৭৫ পয়সা। আগের লটে যা ছিলো ১৫২ টাকা।
উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই মশার ওষুধ
কিনতে পারবে ডিএনসিসি
এদিকে, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে মশার ওষুধ ক্রয় ও আমদানি করতে পারবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখতে ডিএনসিসিকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কীটনাশক ক্রয়/আমদানির নীতিগত অনুমোদ দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মশা নিয়ন্ত্রণ কর্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখতে ডিএনসিসি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কীটনাশক ক্রয়/আমদানির প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। সভায় আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তাবটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের (নং-ডবিস্নউপি-এইচইডি-বিসিপিএস-১) আওতায় তিনটি বেইজমেন্টসহ এক হাজার ৫০০ আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম ও ১২ তলাবিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবনের পূর্ত, অভ্যন্তরীণ স্যানিটারি, বৈদু্যতিক এবং বহিঃবৈদু্যতিক কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, এ ক্ষেত্রে মোট ব্যয় হবে ১৮৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৬ টাকা। ময়মনসিংহের এইচএসএল-এমএসই (জেভি)-এ কাজ পেয়েছে। মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ প্রস্তাটি নিয়ে আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।