বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১
আজ একনেক সভায় পেতে পারে অনুমোদন

চীনের অনুদানে বার্ন ইউনিট পাচ্ছে চমেক হাসপাতাল

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০
চীনের অনুদানে বার্ন ইউনিট পাচ্ছে চমেক হাসপাতাল

দগ্ধ মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চীনের অনুদানে স্থাপন করা হচ্ছে বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিট।

বার্ন ইউনিটের জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে হবে ছয়তলা একটি ভবন। স্থাপনাটি হয়ে গেলে সেখানে একসঙ্গে ১৫০ জন পোড়া রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন। এটি হবে দেশের দ্বিতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিট।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বার্ন ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৮০ কোটি টাকা। বাকি ১০৫ কোটি টাকা সরকার দেবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

'চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট স্থাপন' শিরোনামে প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে ছয়তলা ভবন নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে সময় লাগবে প্রায় দুই বছর। সে হিসাবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। ইউনিটটি চালু করতে জনবল লাগবে অন্তত ৫০০ জন। তবে জনবল অনুমোদনে এখনো কাজ শুরু করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অভিযোগ রয়েছে, জনবল অনুমোদনের চেয়ে স্থাপনা নির্মাণের দিকে বেশি মনোযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

জনবল অনুমোদনে সাধারণত দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতায় এ প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক বছরও লেগে যায়। ফলে স্থাপনার নির্মাণকাজ শেষ হলেও অনেক সময় দেখা যায়, জনবলের অভাবে স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি চালু করা যায় না।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আবু হোসাইন মোহাম্মদ মঈনুল আহসান বলেন, 'কেবল তো অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে; ভবন নির্মাণ শুরুর পর জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। জনবল নিয়োগে বেশি সময় লাগবে না।' স্থাপনা চালু ও যন্ত্রপাতি সংযোজন করার আগে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হবে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতায় একটি বার্ন ইউনিট আছে। এ ছাড়া রয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। সারাদেশে দগ্ধ রোগীদের এখন ঢাকায় নিয়ে আসতে হয়। এতে সময় নষ্ট হয়। ততক্ষণে অনেক রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিসের এক হিসাব অনুযায়ী, গত বছর দেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে ১০২ জনের, আহত হয়েছেন ২৮১ জন। এ বছর ২৮ ফেব্রম্নয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুনে মারা যান ৪৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বেশিরভাগ ভারী শিল্প চট্টগ্রামে। জাহাজভাঙা, পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল ডিপো রয়েছে সেখানে। আছে সমুদ্রবন্দরও। এ অবস্থায় মাঝেমধ্যেই জেলায় অগ্নিকান্ড ঘটছে। বাড়ছে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ও প্রাণহানি। ২০২২ সালের ৪ জুন রাতে সীতাকুন্ডের কেশবপুরে বিএম ডিপোয় আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন ৫০ জন। গত বছর একই উপজেলার কদমরসুল এলাকায় কারখানায় অগ্নিকান্ডে ছয়জন নিহত হন।

কর্মকর্তারা আরও বলছেন, চট্টগ্রামে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা সুবিধার অভাবে তাদের দুর্ভোগ ও মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। জেলায় কোনো অগ্নিকান্ড ঘটলে দগ্ধ ব্যক্তিদের ঢাকায় নিয়ে সেবা দেওয়া কঠিন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য এ বার্ন ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নতুন ওই প্রকল্পের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি বার্ন ইউনিট করতে ২০১৬ সালে চীনকে অনুরোধ জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সমীক্ষা চালায় দেশটি। পরে চীন সরকার প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চীন সরকারের সঙ্গে গত বছরের মার্চে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। যেহেতু চীন সরকার এ প্রকল্পে ৬৩ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে, তাই তাদের নির্বাচিত ঠিকাদারই অবকাঠামো নির্মাণ করবে। অবকাঠামো নির্মাণের যন্ত্রপাতি, প্রকৌশলী ও উপকরণ সরবরাহ করবে দেশটি। প্রকল্প শেষে এক বছর প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেবে তারা। অন্যদিকে পানি সরবরাহ, বিদু্যৎ, টেলিযোগাযোগ সংযোগসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেবে বাংলাদেশ সরকার।

আবু হোসাইন মোহাম্মদ মঈনুল আহসান জানান, চট্টগ্রামের পর সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী ও ফরিদপুর- এ চার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এসব ইউনিট স্থাপনে অর্থায়ন করবে সৌদি আরব সরকার। বার্ন ইউনিটগুলো স্থাপিত হলে ঢাকায় কমবে দগ্ধ রোগী আসার হার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে