ট্রাভেল এজেন্সির মালিকসহ চক্রের তিন সদস্য গ্রেপ্তার
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
প্রকাশ | ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে কিরগিজস্তানে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের প্রধানসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রের প্রধান 'জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল' নামে ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। এজেন্সিটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোকে (বিএমইটি) চিঠি দেওয়া হয়েছে সিআইডির তরফ থেকে।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, মানবপাচার আইনে দায়েরকৃত একটি মামলার তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ৬ মে সোমবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে ঢাকার নয়াপল্টনের ওই ট্রাভেল এজেন্সিতে অভিযান চালায় সিআইডির একটি দল। অভিযানে গ্রেপ্তার হয় মানব পাচার চক্রের অন্যতম হোতা ও এজেন্সিটির মালিক ইব্রাহিম মলিস্নক নাহিদ (৩৫) এবং তার দুই সহযোগী শারমিন হোসেন লাবণী (৩৬) ও আরিফুর রহমান সাদী (২৪)। আলামত হিসেবে জব্দ হয় বিজ্ঞাপন তৈরি করে ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারের কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, একটি আইফোন, ৫টি স্মার্ট ফোন ও একটি বাটনযুক্ত মোবাইল ফোন। পলাতক আরও দুই জনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সিআইডি প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানান, ইতোপূর্বে এজেন্সিটির মাধ্যমে যত মানুষ কিরগিজস্থানে গেছেন, তাদের সবাই পাচারের শিকার হয়েছেন। দেশটিতে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন পাচারের শিকার হওয়া বাংলাদেশিরা। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে বিএমইটিকে এজেন্সিটির বিরুদ্ধে তাদের আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অ্যাডিশনাল এসপি আজাদ রহমান জানান, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ঢাকার পল্টন মডেল থানায় সোনা মিয়া নামের এক রিকশা চালক বাদি হয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এজেন্সিটির বিরুদ্ধে ৩২ নম্বর মামলাটি দায়ের করেন। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার করা হয় তাদের।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে কিরগিজস্তানে কার ওয়াশিং ভিসায় মাসিক ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সেই বিজ্ঞাপন দেখে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতারিত হন রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানাধীন নলিয়া পাড়ার বাসিন্দা রিকশা চালক মোহাম্মদ সোনা মিয়া। বিজ্ঞাপনে প্রচারিত ঠিকানা মোতাবেক তিনি নয়াপল্টনে ওই এজেন্সির অফিসে যান। অফিসের লোকজনের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে সোনা মিয়া তার গরু, রিকশা, ঘর ও ভিটা মাটি বিক্রি করে কিরগিজস্তানে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করেন।
টাকা নিয়ে এজেন্সিতে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, তারা সরাসরি টাকা নেন না। এমন কথায় রিকশা চালকের মনে আরও বিশ্বাস জন্মায়। টাকা তাদের এজেন্সির সদস্য ফরিদপুরের আকাশ শেখ (২১) ও আকতার সরদারের (২৩) কাছে জমা দিতে হবে। পরে সোনা মিয়া এজেন্সির কর্মকর্তাদের কথামতো তাদের কাছে টাকা জমা দেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সোনা মিয়াকে কিরগিজস্তানে যাওয়ার জন্য ভিসার কপি ও বিমানের টিকিট দিয়ে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। সেখানে ইমিগ্রেশন পুলিশ অনলাইনে ভিসার কোনো তথ্য না পেয়ে সোনা মিয়ার যাত্রা স্থগিত করে। পরে সোনা মিয়া এ ব্যাপারে জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এজেন্সি নানা টালবাহানা করে সময় পার করতে থাকে। পরবর্তীতে সোনা মিয়া মামলা দায়ের করেন।