আদালত অবমাননা এবং সোস্যাল মিডিয়ায় বিচারকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হেয় প্রতিপন্নমূলক বক্তব্য সংবলিত ভিডিও প্রকাশ করার ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-২ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম পলাশ।
মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তবে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেননি। এ সময় আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১১ জুন দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে পিপির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খোন্দকার রেজা-ই রাকিব।
এর আগে ৩ এপ্রিল আদালত অবমাননা এবং সোস্যাল মিডিয়ায় বিচারকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হেয় প্রতিপন্নমূলক বক্তব্য সংবলিত ভিডিও প্রকাশ করায় তার ব্যাখ্যা দিতে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-২ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম পলাশকে তলব করেন হাইকোর্ট। ৭ মে তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ঘটনায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
গত ৩১ মার্চ খুলনা মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক তরিকুল ইসলামকে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা ও হেয় প্রতিপন্নমূলক ভিডিও প্রকাশ ও আদালতে অশালীন আচরণের ঘটনায় খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-২ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জহিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতি বরাবর চিঠি দেন।
চিঠিতে বলা হয়, 'একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত কক্ষে আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশের সঙ্গে কিছুটা বাকবিতন্ডা হয়। এ কারণে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি মামলাটি না শুনে চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিই। তখন জহিরুল ইসলাম পলাশ বলে ওঠেন, আপনি আমাকে না শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন? আমি বললাম, এটা কোর্টের প্রসিডিউর যেহেতু আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে আমার কিছুটা বাকবিতন্ডা হলো। তখন প্রতু্যত্তরে উচ্চস্বরে তিনি বললেন, আপনার চেয়ে আমি এই বারে আগে আসছি। আমি প্রসিডিউর ভালো বুঝি। আপনার ব্যবহার সবচেয়ে খারাপ। আপনি অনিয়ম করেন। আমরা খুলনা বারে ২০০০ জন আর আপনারা মাত্র ৫০ জন। আমি আপনাকে চিনি। আপনার বাড়ি চিতলমারী। আমার বাড়িও চিতলমারী। আমি...(অমুক) এর ছেলে। আপনাকে আমি ভালো করে চিনি। আপনার বিরুদ্ধ আমি চিফ জাস্টিসের কাছে যাব। আপনি আমাকে ইংলিশ শোনান। বারের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিতে কাজ হবে না। এমন অনেক বিচারক ছিলেন যারা এখান থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ারও সময় পায় নাই। এটা মনে রাইখেন। আপনি আপনার ফিউচারের জন্য প্রস্তুত থাকেন। উচ্চস্বরে এহেন বক্তব্য প্রদান করার পর তিনি এজলাস ত্যাগ করেন। বিচারক তরিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে বাদীপক্ষের আইনজীবীর এহেন আচরণে বিব্রতবোধ করায় আইনজীবীর মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, খুলনার কাছে বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণ করি।'
তিনি বলেন, আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশ সেদিনই সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ঋরৎংঃ ঘবংিইউ ২৪ নামে একটি পেজে লাইভে আসেন এবং আদালতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্যতা ও কোর্ট প্রসিডিউরকে পাশ কাটিয়ে বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। ওই বিষয়টি গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার শুরুতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-২ এর বিচারক জানান যে, তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ওই আইনজীবী সোস্যাল মিডিয়ায় তার প্রদত্ত ভিডিওচিত্র সেন্ড করেছেন। যা উপস্থিত খুলনা বিচার বিভাগে কর্মরত তার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (মহানগর দায়রা জজ ও সিএমএম মহোদয়) ও অন্য বিচারকরা জেনেছেন-শুনেছেন। ওই ভিডিওতে বিচারক হিসেবে তাকে দুর্নীতিবাজসহ আরও অনেক বিষয়ে মিথ্যা, বানোয়াট এবং সম্মানহানিকর বক্তব্য।
পরে প্রধান বিচারপতি জহিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদনটি হাইকোর্টে পাঠান। তার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি মঙ্গলবার শুনানির জন্য ওঠে।