নিজেরাই সবল হতে চায় ন্যাশনাল ব্যাংক
প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
মার্জার বা একীভূত হওয়া নিয়ে আগের পর্ষদের পথেই হাঁটছে সদ্য গঠিত ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। একীভূত হওয়া থেকে সরে আসার কথা জানিয়ে বলেছে, তারাও কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হয়ে নিজেরাই সবল হতে চায়।
সোমবার ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আলহাজ খলিলুর রহমান এ কথা বলেন। এ সময় নতুন পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা ছিলেন।
এর আগে রোববার (৫ মে) মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় আবারও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির বিদ্যমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন পর্ষদ জানায়, নতুন পরিচালনা পর্ষদ ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে নিয়ে ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জনে নিরলস কাজ করবে। এছাড়া বিভিন্ন সূচকে উন্নয়ন নিশ্চিত করে ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনবে।
নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, 'আমরা ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন বুঝি। ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ও তাদের পাশে থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে একটি ব্যবসায়ীবান্ধব ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর। এর মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে ও তার হারানো এতিহ্য ফিরে পাবে বলে আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি। ন্যাশনাল ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রায় আমরা সাংবাদিকদের পাশে চাই।'
এর আগে রোববার ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের 'ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি' বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠন করে দেওয়া হলো।
চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ছাড়াও ব্যাংকটির নতুন পর্ষদের অন্য পরিচালকরা হলেন- উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, সিকদার ইন্সু্যরেন্সের প্রতিনিধি পরিচালক লে. জে. মো. সফিকুর রহমান (অব.), দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এহসানুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম তফাজ্জল হক ও অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, পেশাদার হিসাববিদ ড. রত্না দত্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।
ন্যাশনাল ব্যাংকের বিলুপ্ত পর্ষদের একাধিক পরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তাদের ফোন করে পদত্যাগের জন্য বলা হয়। সে অনুযায়ী তারা পদত্যাগ করলে বিকালে পর্ষদ পুনর্গঠনের চিঠি আসে। তবে কেন হঠাৎ তাদের পদত্যাগ করতে বলা হলো এমন প্রশ্ন সবাই এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত বছরের শেষদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সাত সদস্যের পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়। ফলে প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে ছিটকে যান। একই সঙ্গে জয়নুল হক সিকদারের ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদারও পরিচালক পদ হারান। ওই পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে কেবল পারভীন হক সিকদার পর্ষদে স্থান পেয়েছিলেন, যিনি জয়নুল হক সিকদারের মেয়ে। তবে এবারের পর্ষদ থেকে তিনিও ছিটকে পড়েছেন।
বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার, পরিচালক নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টি, আমানতকারীদের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয় বলে ওই সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে উলেস্নখ করা হয় তখন।
ওই সময় চারজন পরিচালক নেওয়া হয় উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে। বাকি তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে তখন ব্যাংকটির পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়। এবার তিনি বাদ পড়েছেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান কেডিএস গ্রম্নপের চেয়ারম্যান। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়।
বিগত ৯ এপ্রিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত হওয়ার কথা জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মীরাও আন্দোলন শুরু করেন। ফলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেনি। ২৭ এপ্রিল ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ তৈরি হয়।