দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ বছরের প্রথম চার মাসে ডেঙ্গু রোগী ও ডেঙ্গুতে মৃতু্যর সংখ্যা গত বছরকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ২০২৩ সালের প্রথম চার মাসে রোগী ছিলেন ৯৮৬ জন ও মারা গেছেন ১১ জন। কিন্তু এ বছরের প্রথম চার মাসে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৩৯ জন এবং মারা গেছেন ২৪ জন। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারাও গেছেন দ্বিগুণের বেশি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এবার দেশে বিভিন্ন জেলাগুলোতে আগের তুলনায় রোগী বাড়বে। কারণ বিভিন্ন জেলায় লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আগে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক রোগী পাওয়া যেত এখন জেলাগুলোতেও রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার যায়যায়দিনকে বলেন, 'অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দেশের কিছু কিছু জেলায় ডেঙ্গু মশা বাড়বে। আমরা কিছু দিন আগে দেশের বেশ কিছু জেলায় গিয়ে এডিস মশার উপস্থিতি পেয়েছি। তার মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনা, বরিশাল, চাঁদপুর ও গাজীপুর জেলায় এবার ডেঙ্গু মশার উপস্থিতি বেশি। এসব জেলায় ডেঙ্গু রোগী বাড়বে। এখনি মশা নিয়ন্ত্রণে মুখ্যম সময়।'
তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনা, বরিশাল, চাঁদপুর ও গাজীপুর জেলার কিছু কিছু এলাকার কিছু বাড়িতে এডিস মশা পাওয়া যায়। এসব মশা বংশ বিস্তার করবে। সামনে বৃষ্টির মৌসুম, যেখানে সেখানে পানি জমে থাকবে। ওই সব স্থানে মশা ডিম পারবে। লার্ভা হবে, পরে পূর্ণাঙ্গ মশা হবে। এখনি সময় যে সব জেলা আমরা চিহ্নিত করেছি, সেসব জেলার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করতে পারলে মশা কমবে। নতুবা সে সব জেলায় মশা বাড়বে, রোগীও বাড়বে।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) ইনচার্জ ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে জানুয়ারিতে ১ হাজার ৫৫ জন। এপ্রিলে ছিল বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০৪ জন রোগী। তবে এ বছরের এপ্রিলে মৃতু্য হয় দুইজনের। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম। এর আগে সর্বোচ্চ মৃতু্য হয়েছিল জানুয়ারিতে ১৪ জন। এরপর মার্চে পাঁচজন ও ফেব্রম্নয়ারিতে তিনজন।
কবিবুল বাশার বলেন, এখন থেকে মশা বাড়তে থাকবে। বছরের আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি মশা থাকে, সে মাসে হাসপাতালে সবচেয়ে রোগী পাওয়া যাবে। সে সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ও মুগদা এলাকায় বেশি রোগী পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) রাজধানী ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ সময় কেউ মারা যাননি এ নিয়ে এসব হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭৬৯ জন এবং মারা গেছেন ১৩ জন। এছাড়া ছাড়পত্র নিয়েছেন ৬৯৯ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৫৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ২৩৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন ২ হাজার ৯৫ জন। বর্তমানে সারাদেশে ভর্তি রয়েছেন ১২০ জন। পাশাপাশি মারা গেছেন ২৪ জন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ বা ১ হাজার ৩৭৩ জন পুরুষ এবং ৩৯ শতাংশ বা ৮৬৬ জন মহিলা। মোট মৃতু্যর ৪৬ শতাংশ বা ১১ জন পুরুষ এবং ৫৪ শতাংশ বা ১৩ জন মহিলা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৫৫ জন, ফেব্রম্নয়ারি মাসে ৩৩৯ জন, মার্চ মাসে ৩১১ জন, এপ্রিল মাসে ৫০৪ জন, মে মাসের প্রথম দুদিনে ৩০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ছয়জন ডেঙ্গু রোগী। এর বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে ১২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩ জন, ময়মনসিংহে ১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন ও বরিশাল বিভাগে ১ জন রয়েছেন। এ সময় কেউ মারা যাননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শুরুর দিক থেকেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুবই তৎপর। মশার আবাস ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে পারলেই এডিস মশা নির্মূল করা যাবে। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। তবে ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রস্তুত রয়েছে।