অটোরিকশা চুরি চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার

৯ শতাধিক অটোরিকশা চুরি

প্রকাশ | ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
অটোরিকশা চুরি করে বিক্রির সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ৯ মাসে অন্তত শতাধিক অটোরিকশা চুরি করেছে চক্রটি। চোরাই রিকশাগুলো তারা দুটি গ্যারেজে বিক্রি করত। নারায়ণগঞ্জের একটি গ্যারেজ থেকে সাতটি চোরাই রিকশা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা যাত্রী সেজে এক বৃদ্ধ রিকশা চালককে কৌশলে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছিল। ঘটনার ছয় দিন পর ওই রিকশা চালকের মৃতু্য হয়। রোববার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান। তিনি আরও জানান, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহ আলম মিয়া (৬০) নামে এক রিকশা চালকের মৃতু্য হয়। তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানান। ওই বৃদ্ধকে খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে তার মৃতু্য হয় বলে চিকিৎসকরা জানান। বৃদ্ধের রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ডিসি বলেন, সেই মামলার তদন্তের ধারাবাহিকতায় ঢাকার বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকার শতাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করা হয়। সেই ফুটেজের সূত্র ধরে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকার মুগদা থানাধীন মানিক নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির হোতা শরীফুল ইসলাম, চান্দু ও শাহাবুদ্দিনকে শনাক্ত করা হয়। গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় শরীফুল ইসলাম (৩২) ও চান্দুকে (৪০)। এদের কাছে পাওয়া গেছে ৩২টি রিভোট্রিল নামের চেতনানাশক ট্যাবলেট ও একটি চোরাই অটোরিকশা। গ্রেপ্তার দু'জনের তথ্য মতে, চক্রটি চোরাই অটোরিকশা নারায়ণগঞ্জে ও ঢাকার মিরপুরের একটি গ্যারেজে বিক্রি করে দিত। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্দিরগঞ্জ থানাধীন মিজমিজি এলাকার ওই চোরাই অটোরিকশা বেচাকেনায় জড়িত গ্যারেজটিতে অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার করা হয় চোরাই অটোরিকশা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ফুল মিয়া (৫৯) ও আল আমিনকে (৩৮)। মিরপুরের গ্যারেজে অভিযান চালালেও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, গ্রেপ্তাররা পেশাদার অটোরিকশা চোর চক্রের সদস্য। তারা গত ৯ মাসে শতাধিক অটোরিকশা চুরি করেছে। নিহত শাহ আলমের রিকশাটিও তারাই চুরি করেছে। প্রতি সপ্তাহে তারা অন্তত ৩টি অটোরিকশা চুরি করত। প্রতিটি রিকশা বিক্রি করত ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। চুরির পরিকল্পনা নিয়েই গত ৮ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে রামপুরা থানাধীন বনশ্রী এলাকা থেকে যাতায়াতের জন্য শাহ আলমের রিকশাটি ভাড়া করেন গ্রেপ্তার শরীফুল ইসলাম ও চান্দু এবং পলাতক শাহাবুদ্দিন। তারা মাঝপথে কৌশলে রিকশা চালককে একটি দোকানে নিয়ে চায়ের সঙ্গে অতিমাত্রায় রিভোট্রিল বড়ি গুঁড়ো করে মিশিয়ে সেবন করিয়ে দেয়। খানিক পরে বৃদ্ধ অচেতন হয়ে পড়লে তার রিকশাটি নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। মূলত তিনজনের একেকটি চক্র গড়ে তোলা হয়। চক্রের সদস্যরা সবাই যাত্রীবেশে অটোরিকশায় উঠে। এরপর চালককে অচেতন করে রিকশা চুরি করে। চুরি করা রিকশা এক চোর চালায়। বাকি দুই চোর যাত্রীবেশে রিকশায় বসে থাকে। যাতে করে মানুষ সন্দেহ করতে না পারে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে অটোরিকশা চালক শাহ আলমের (নিহত) রিকশায় দুজন যাত্রী উঠে। পরে পথে তাকে অজ্ঞান করে রিকশাটি নিয়ে যায় চক্রটির সদস্যরা। ঢাকায় এমন আরও চোরাই চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মূলত এসব অপরাধী এক বা একাধিক সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন ও রামপুর থানার ওসি মশিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।