উপজেলা নির্বাচন সরকারের পাতা ফাঁদ : মির্জা আব্বাস

প্রকাশ | ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস -ফোকাস বাংলা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচন 'সরকারের পাতা ফাঁদ'। এর আগে ক্ষমতাসীনরা জাতীয় নির্বাচনে নেওয়ার ফাঁদ পেতেছিল কিন্তু বিএনপি সেই নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে। জনগণ ভোট দিতে না পারলে সেই নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে মির্জা আববাস এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিবের মুক্তির দাবিতে হাবিবুর রশিদ হাবিব মুক্তি পরিষদ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। ক্ষমতাসীনদরে উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচনের কথা আপনাদের মুখে মানায় না। ৭ জানুয়ারি কি লোকজন ভোট দিতে গিয়েছিল? এবারও (উপজেলা নির্বাচনে) যাবে না। উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল নিজেরাই নিজেদের প্রার্থীদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না। বিএনপি দাঁড়ালে কী অবস্থা হতো! তাই বলা যায়, বিএনপির সিদ্ধান্ত সঠিক আছে এবং থাকবে। মির্জা আব্বাস বলেন, দেশে 'স্বৈরশাসন' চলছে। জনরোষের মুখে একদিন না একদিন এই সরকারের পতন ঘটবেই। এটা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। গ্রেপ্তার করে বিশ্বে কোনো আন্দোলন থামানো যায়নি। আন্দোলন হবে, মুক্ত হবে দেশ। বিএনপি নেতা তারেক রহমান একদিন দেশে ফেরত আসবেন। জনরোষের মুখে এই সরকারের যখন পতন হবে, তখন দেশে ফেরত আসবেন এবং নেতৃত্ব দেবেন দেশকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, আজ দেশের 'করুণ অবস্থা' সম্পর্কে আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই জানে। সবচেয়ে বেশি জানেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কারণ দলের প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মীর হয় বাবা নয় সন্তান অথবা ভাই আবার অনেকের স্বামী জেলে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য 'যুদ্ধ করতে করতে মৃতু্যর পথে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন'। তার অবস্থা ভালো নয়। 'তাকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন আইন নেই। আইন থাকবে না কেন? রাশেদ খান মেননকে বিদেশে পাঠানো হয়নি? আ স ম আবদুর রবকে বিদেশে পাঠানো হয়নি? আ স ম রবকে বন্দি অবস্থায় বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। সরকারকে উৎখাত করা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই সরকারকে উৎখাত করা বা রাখার দায়দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। জনগণ যখন মনে করবে, তখন লাঠি দিয়ে এই সরকারকে ফেলে দেবে। মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া দেশের সর্বনাশ করে গেছেন আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তা ঠিকঠাক করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এমন দাবি করেন। কিন্তু কী ঠিক করছেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকে নজর দেন, টাকাপয়সা নেই। কয়েকজন লোকের দিকে নজর দেন, পেট বড় হয়ে গেছে। হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। ওই উন্নয়ন চুরির উন্নয়ন, দেশের মানুষ মেনে নেবে না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নেতাকর্মীদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ একসঙ্গে চালাতে হবে। না হলে হাবিবুর রশীদের মতো অনেককে জেলে যেতে হবে। সুশাসন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সংগঠনের আহ্বায়ক এ এ জহির উদ্দিন তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জয়দেব জয়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নাসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আছি : মঈন খান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ষড়যন্ত্র করছে না, বরং আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে সেটা সরকার বলছে কিন্তু এ দেশের মানুষ তো বলেনি কেউ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। শনিবার সকালে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নবগঠিত কমিটির পক্ষ থেকে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা ও ফাতিহা পাঠ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মঈন খান বলেন, বিগত ১৫ বছরে যে একদলীয় শাসন চলছে তা অলিখিত বাকশাল। সেই বাকশালের শাসনের ফলশ্রম্নতিতে বাংলাদেশের মানুষ আজ নির্যাতিত। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নেই, ভোটের অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই, নারীর অধিকার নেই, শিশুর অধিকার নেই। বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। যে গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, বিএনপির রাজপথে আন্দোলন করছে পরিবর্তনের জন্য। কারণ বাংলাদেশের মানুষ একদলীয় শাসনে বিশ্বাস করে না। তারা ভোটের অধিকার চায়, তারা কথা বলার অধিকার চায়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাম-ডান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে- এ প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, এই সরকার একদলীয় অগণতান্ত্রিক সরকার। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে, সেই প্রহসনের নির্বাচনে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হননি। আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকায় বসে ঠিক করেছে কোন আসনে কাকে এমপি বানাবে। সেই প্রতিনিধিগুলো আজকে নিজেদের এমপি বলে জাহির করছেন। এই এমপিদের নিয়ে আজকে একটি জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন সরকার গঠিত হয়েছে। এখানে ষড়যন্ত্রের কথা আসছে কেন, সরকার ষড়যন্ত্রের কথা কেন বলছে; সরকার জনগণকে ভয় পায় সেটাই কি কারণ? এখানে ষড়যন্ত্রের কোনো প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র, স্বাধীনতার জন্য শত শত বছর ধরে আন্দোলন করেছে। তারা পরম পরাক্রমশালী মোঘল সাম্রাজ্যের অধীনতা পর্যন্ত স্বীকার করেনি।