দেশের চার জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। জেলাগুলোর মধ্যে মাদারীপুরে ট্রাক-ইজিবাইক মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই বৃদ্ধ, গাজীপুরে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে দুই নির্মাণশ্রমিক, মুন্সীগঞ্জে প্রাইভেটকার খাদে পড়ে একই পরিবারের তিনজন ও নোয়াখালীতে ট্রাকচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে চলন্ত অবস্থায় ট্রাকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এক চালক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, রাজৈরে গাছ বোঝাই ট্রাক ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। তারা ইজিবাইকের যাত্রী ছিলেন। শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাজৈর-শ্রীনদী আঞ্চলিক সড়কের কাঁঠালিয়া সেতুর কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার চরঘুন্সী গ্রামের মৃত নবাব আলী মুন্সীর ছেলে হোসেন আলী মুন্সী (৫৫) ও একই গ্রামের মৃত লাল মিয়া হাওলাদারের ছেলে ধলু হাওলাদার (৬০)।
পুলিশ জানায়, কাঁঠালিয়া সেতুর কাছে শ্রীনদীগামী ট্রাক ও অন্যদিক থেকে আসা টেকেরহাটগামী যাত্রীবাহী ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইজিবাইকের দুই যাত্রী হোসেন আলী মুন্সী ও ধলু হাওলাদার ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় ইজিবাইকে থাকা আরও তিন যাত্রী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজৈর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, 'ধারণা করা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। নিহতদের পরিবার চাইলে আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে। ট্রাকটি উদ্ধার করা যাবে কিন্তু চালক পলাতক রয়েছেন।'
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, শ্রীপুর মাওনা-শ্রীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পৌর এলাকার ভংনাহাটি গ্রামে মাটিবাহী ড্রাম ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে দুই নির্মাণশ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ১৪ নির্মাণশ্রমিক আহত হয়েছেন। শনিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাসেল মিয়া (২৫) ও একই গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে আবু সুফিয়ান (২৫)।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার বেলাল আহমেদ জানান, একটি পিকআপে করে মিক্সার মেশিন ও ১৩ জন শ্রমিক ঢালাই কাজে শ্রীপুর থেকে মাওনা অভিমুখে আনসার রোড এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারী পিকআপটি শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শ্রীপুর-মাওনা আঞ্চলিক সড়কের ভাংনাহাটি কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে আসামাত্রই পেছন থেকে একটি ডাম্প ট্রাক তাদের চাপা দেয়। ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় পিকআপে থাকা মানুষ ও মিক্সিং মেশিন প্রায় ২০-২৫ ফুট সামনে চলে যায়। পিকআপ উল্টে মিক্সার মেশিনের নিচে চাপা পড়েন শ্রমিকরা। ঘটনাস্থলেই রাসেল মিয়া নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সুফিয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনায় আহত নির্মাণশ্রমিক খাইরুল ইসলাম (২৫), পারভীন আক্তার (৫২), আলমগীর হোসেন (১৯), মো. সুরুজ (২৮), মো. লাল মিয়া (৪০), মো. নুরুল ইসলাম (২০), আমির মিয়া (৪৮), মো. মহসিন (২৮), আবু হানিফ (২০), মো. এরশাদ (২৫), মোছা. আম্বিয়া (৩০), ওয়াহাব উদ্দিন (৩০), মিজানুর রহমান (৩৫) ও
আবদুল হাইকে (২৯) শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভুষণ দাস বলেন, 'ভোরে দুজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। আহতদের কয়েকজনকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক তাদের অন্যান্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত দুজনের মৃতু্যর খবর পেয়েছি। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় ড্রাম ট্রাক আটক করা হয়েছে। তবে চালক বা চালকের সহকারীকে পাওয়া যায়নি। নিহতদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ চলমান।'
এদিকে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাইভেটকার খাদে পড়ে চালকসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। উপজেলার বাউশিয়া এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার কাদরা গ্রামের হোসেন আলী বেপারির ছেলে আলমগীর হোসেন (৫৮), তার ছোট ছেলে জহিরুল ইসলাম (২৭), তার মামি রাহেলা বেগম (৫৫)। আহতরা হলেন- আলমগীর হোসেনের বড় ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০) ও প্রাইভেটকার চালক ইব্রাহিম খলিল সুজন (৩৩)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান, ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী আলমগীর হোসেন সম্প্রতি দেশে ফিরে শুক্রবার পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় কাদরা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বেড়ানো শেষ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় তার মামি রাহেলা বেগমকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে আসছিলেন তিনি।
পথিমধ্যে রাত দেড়টার দিকে তাদের প্রাইভেটকারটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া মানাবে ওয়াটার পার্কের সামনে এলে পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেটকারটি রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময়ে আলমগীর হোসেনসহ ঘটনস্থলেই মারা যান তিনজন। চালকসহ আহত দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে পাঠান ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রিফাত মলিস্নক বলেন, 'রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই। খবর পাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করি। হতাহত সবাইকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে পাঠানো হয়েছে।'
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাদিয়া আফরিন বলেন, 'রাত আড়াইটার দিকে আমাদের হাসপাতালে ৫ জন রোগী নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা ৩ জনকে মৃত ঘোষণা করি। আহত দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।'
গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, 'নিহতদের মরদেহ বর্তমানে পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।'
অন্যদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ট্রাকচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ চারজন নিহত হয়েছেন। শনিবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেগমগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- লক্ষ্ণীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার লতিফপুর গ্রামের মো. রহমত উলস্নাহ ভূঁইয়া (৬৫), সেনাসদস্য ফজলুল করিম (৫০) ও আমানি লক্ষ্ণীপুরের মো. আলাউদ্দিন (৪৫)।
এলাকাবাসী জানান, শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ববাজার এলাকার লক্ষ্ণীপুর-বেগমগঞ্জ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি রুহুল আমিন ও বেগমগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে একটি যাত্রীবাহী অটোরিকশা লক্ষ্ণীপুর থেকে বেগমগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। পথে চন্দ্রগঞ্জ পূর্ববাজার এলাকায় পৌঁছালে ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় সড়ক থেকে ১৫ ফুট নিচে খালে ট্রাক ও অটোরিকশা পড়ে যায়। এতে অটোচালকসহ চারজন নিহত হন।
ওসি রুহুল আমিন আরও বলেন, 'তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একজনের লাশ এখনো খালে রয়েছে বলে অনেকে বলছেন। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।'
চলন্ত ট্রাকে চালকের মৃতু্য
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানঘাটা এলাকায় চলন্ত অবস্থায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চালকের মৃতু্য হয়। এতে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আশপাশের গাড়িতে ধাক্কা দেয়। ট্রাক চালকের নাম মো. আব্দুল মান্নান (৬০)। তিনি কুমিলস্না জেলার দাউদকান্দি থানার বাসিন্দা ছিলেন।
পুলিশ জানায়, এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি প্রথমে সামনে থাকা একটি মোটর সাইকেলে ধাক্কা দেয়। এ ছাড়া পাশে থাকা একটি প্রাইভেটকারের ওপর উঠে যায় ট্রাকটি। এ ঘটনায় প্রাইভেটকারে থাকা তিন শিক্ষার্থী সামান্য আহত হন। হাইওয়ে পুলিশ নিহত চালকের লাশ ও আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন চন্দ্র ঘোষ বলেন, 'চলন্ত ট্রাকটির চালক হঠাৎ মারা যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ট্রাকটি আশপাশের গাড়িতে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেটকারের পেছনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। গাড়িতে থাকা যাত্রীরা সামান্য আহত হয়েছেন। পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন উদ্ধার করেছে।'