ফুটপাতের শরবতে মাছ সংরক্ষণের বরফ

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০

বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী
রোদে পুড়ছে পদ্মাপাড়ের জনপদ রাজশাহী। ঠাঠা সূর্য মাথার ওপর ঢালছে আগুন তাপ। অস্থির করে তুলেছে প্রাণিকূলকে। এর মধ্যে জীবিকার তাগিদে যারা বের হচ্ছেন একটু প্রশান্তি পেতে পান করছেন রাস্তার পাশে বানানো হরেক নামের শরবত। আর এসব শরবতে ব্যবহার করা হচ্ছে মাছের জন্য তৈরি বরফ, যা প্রাণকে সাময়িক প্রশান্তি দিলেও বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর এসব শরবত পানে তৃষ্ণা মিটলেও স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রাজশাহী শহর ঘুরে দেখা গেছে, অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে রাজশাহী নগরে রাস্তার পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে শরবতের দোকান। বিশেষ করে ব্যস্ততম এলাকা সাহেবাজার, লক্ষ্ণীপুর, হড়গ্রাম, গোরহাঙ্গা রেলগেট এলাকায় প্রতিদিন বসছে এসব শরবতের দোকান। ফুটপাতের এসব শরবতে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাছের জন্য তৈরি বরফ। শরবতের নামে কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব রঙিন পানীয়তে মেশানো বরফ কোথা থেকে আসছে তা জানে না ভোক্তারা। ফলে ঠান্ডার পরশ পেয়ে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অজান্তেই শরীরে যাচ্ছে জন্ডিস, ডায়রিয়া ও হেপাটাইটিসসহ নানা রোগের জীবাণু। রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকায় পথচারী শিরিন সুলতানকে দেখা গেল ফুটপাতে শরবত পান করতে। তিনি বলেন, অনেক গরম তাই শরবতটা খেলাম। খেয়ে স্বস্তি পেলাম, মন ঠান্ডা হলো। তবে শরবতে কি ব্যবহার করা হয়েছে তা কি জানেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না জানার কারণে আমরা খাচ্ছি, জানলে তো কেউ খাবে না। নগরীর সাহেব বাজার মাছের আড়তের পাশে রয়েছে আক্তার বরফ মিল। তৈরি হয় মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফ। সেখানে গিয়ে দেখা গেল- বরফের পাটাগুলো অস্বস্থ্যকর জায়গায় রেখে ভাঙা হচ্ছে। সেখান থেকে বরফ কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেল বড়কুঠি এলাকার পদ্মাপাড়ের শরবত বিক্রেতা মোসলেম আলীকে। গরমের শুরু থেকেই তিনি সেখান থেকে বরফ নিয়ে গিয়ে শরবত ব্যবহার করে থাকেন। নগরীর রেলগেট এলাকার শরবত বিক্রেতা খায়রুল শরবতের জন্য তৈরি বরফ ব্যবহারের কথা জানালেও তার দোকানেও তা রাখা হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। শোলার বাক্সে বাজারের পস্নাস্টিকের ব্যাগে রাখা হয়েছে বরফের পাটা। সেখানে দেখতে গিয়ে পাওয়া গেল বরফের সঙ্গে রাখা কাঁচা গরুর মাংসও। খায়রুল জানান, গরম পড়েছে তাই মাংস যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য একপাশে রাখা হয়েছে। শুধু মাছের জন্য বরফ তৈরি করে না সবকিছুর জন্যই তৈরি করা হয় এই বরফ। মাছ ও লাশ সংরক্ষণে তৈরি বরফই কম দামে শরবত বিক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন বরফ কারখানা শ্রমিক মোজ্জাম্মেল হক। তিনি বলেন, আপনি নিয়ে গিয়ে ভালো কিংবা খারাপ কাজে ব্যবহার করতে পারেন এই বরফ। সেটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, 'অস্বাস্থ্যকর রাস্তার পাশে বরফ অথবা আইসক্রিম বা আখের রস বিক্রি করা হচ্ছে এগুলো যদি বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি না করা হয়, হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে না করা হয় তাহলে তো জীবাণু থাকতেই পারে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।'