বাজার দর
সবজির বাজারে গরমের তাপ
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি, বরং গত কয়েক দিন ধরে খুচরা ও পাইকারি বাজারে বাড়ছে এই মসলা পণ্যের দাম
প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে আরেক দফা বেড়েছে সবজির দাম। এদিন বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকার ওপরে। এদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি, বরং গত কয়েক দিন ধরে খুচরা ও পাইকারি বাজারে বাড়ছে এই মসলা পণ্যের দাম। এছাড়া চড়াই রয়েছে আমদানীকৃত আদা ও রসুনের বাজার। তবে কমতির দিয়ে রয়েছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে বেশির ভাগ সবজি। সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া অধিকাংশ সবজি বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১শ' টাকা দরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁপের দাম, প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে; প্রতি কেজি শজনে ডাঁটা ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, বরবটি, করলা, কাকরোল, ঝিঙা, চিচিঙা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। এছাড়া মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, পটোল আর ঢেঁড়শ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।
বিক্রেতারা জানান, গরমে সবজির চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সে অনুপাতে সরবরাহ নেই। এছাড়া সবজি দ্রম্নত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে একধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। তাই বেশির ভাগ সবজির দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির কারণে কারওয়ান বাজারে সবজি সরবরাহ কিছুটা কম ছিল বলেও জানায় বিক্রেতারা।
এদিকে বাজারে নতুন করে পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকার মধ্যে। এছাড়া বাজারে আদা, রসুনের দামও বাড়তি। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা ও রসুন বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা দরে। তবে গত সপ্তাহের চড়া দামে স্থিতিশীল রয়েছে চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ মাছের বাজার।
তবে বাজারে গত কয়েক দিনে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কমতির দিকে রয়েছে। এদিন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে, যা গত শুক্রবারের তুলনায় ২০ টাকা কম। এছাড়া প্রতি ডজন ডিম প্রায় ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সোনালি মুরগির দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে।
ডিম ও মুরগির দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি সুমন হালাদার জানান, প্রচন্ড গরমে ডিম পাড়া বা পরিণত বয়সের মুরগি হিটস্ট্রোকের শিকার হচ্ছে। ফলে খামারিরা সময়ের আগেই মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। যে মুরগি ৪০ দিন পালন করার কথা সেটা ৩০ দিনেই বিক্রি কওে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ অপরিপক্ব অবস্থায়ই মুরগি বিক্রি কওে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাজারে মুরগির দাম অনেক কমে এসেছে। এছাড়া গরমের কারণে ডিমও সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না, যে কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে, এতে দাম কমতির দিকে রয়েছে। তবে লোকসানে রয়েছে খামারিরা।
এদিকে শুধু খুচরা বাজারে নয়, তীব্র তাপপ্রবাহের উত্তাপ বেড়েছে পাইকারি বাজারের পণ্যের দামেও। যার প্রভাব দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা ব্যববসায়ীদের। তারা জানান, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দিলেও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে। পাশাপাশি আমদানীকৃত রসুন ও আদার বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশে রসুন ও আদার দামও বাড়তির দিকে রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশসহ ছয় দেশে প্রায় এক লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটান, বাহরাইন, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা। তবে এই পেঁয়াজের মধ্যে কতটুকু বাংলাদেশ পাবে তার পরিমাণ নিশ্চিত করা যায়নি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, ঢাকা মহানগরীর খুচরা বাজারগুলোতে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৭৫ টাকা, রসুন ১৭০ থেকে ২৪০ ও আদা ১৯০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যেখানে মাত্র ২০ দিন আগে পেঁয়াজের খুচরা দাম ছিল ৪৫ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১২০ থেকে ২২০ ও আদার দাম ছিল ১৯০ থেকে ২৫০ টাকা।
এছাড়া এখনো বাড়তি দাম রয়েছে চিংড়ি ও ইলিশ মাছের বাজারে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরা শুরু হলেও জেলেরা তেমন মাছ পাচ্ছে না, ফলে দাম আগের থেকে আরও বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহের দামে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের বাজার। এদিন ৪শ' থেকে ৫শ গ্রামের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ১২শ' টাকার ওপরে। ৮শ' গ্রামের ওপর ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৮শ' এবং ১ কেজির ওপর ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৪শ' থেকে ২৮শ টাকা
দরে। মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় কাতল ৪শ' টাকা, বড় পাঙাশ ২২০ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩শ' টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, শিং মাছ ৪শ' থেকে ৫শ' টাকা, শোল মাছ ৮শ' টাকা, পাবদা ৪শ' থেকে ৫শ' টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকারভেদে ৬শ' থেকে ৭শ' টাকা, মলা মাছ ৫শ' টাকা, বাইলা ৮শ' টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ' টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা, গুঁড়া মাছ ৩শ' টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ' টাকা, গলদা ৯শ' এবং রূপচাঁদা ১২শ' টাকা দরে।