আজকের যায়যায়দিন

যশোরে দাবদাহে পিচগলা সড়ক তদন্তে নেমেছে দুদক। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় যশোর নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলাপিচ পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা দেখেন দুদকের কর্মকর্তারা। দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। চলতি মৌসুমে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই সপ্তাহ আগে থেকেই প্রচন্ড এ দাবদাহের কারণে গলতে শুরু করে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কের পিচ। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরিবহণ শ্রমিক, নেতাসহ সচেতন মহলের দাবি দুর্নীতি করতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় পিচ গলে যাচ্ছে। এতে করে যানবাহন চলাচলে সমস্যায় পড়ছেন চালকরা। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু

করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর-নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলাপিচ পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা দেখেন দুদকের কর্মকর্তারা।

সড়ক পরিদর্শনকালে দুদক যশোরের সহকারী পরিচালক চিরঞ্জন নিয়োগী, সহকারী পরিদর্শক সাফিউলস্নাহসহ সড়ক বিভাগের দু'জন সহকারী প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন।

যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, 'কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর-নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলাপিচ পরীক্ষা করেছি। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত লিপিবদ্ধ করে আমরা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাব। তদন্তের স্বার্থে আমরা এর বেশি বলতে পারছি না।'

সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, চার মাস আগে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কে পাথর কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

সরেজমিনে যশোর-নড়াইল সড়কের যশোর অংশের ঝুমঝুমপুর এলাকাতে দেখা গেছে, আজও সড়কের পিচ গলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সড়কে যান চলাচলের সময় পিচ চাকায় লেগে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে। যশোর-নড়াইল সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এই সড়ক সংস্কারের সময়। এ সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে দাবদাহে সড়কের পিচ গলে যাওয়াতে নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্টদের নির্মাণ কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুদক ও সড়ক জনপথের কর্মকর্তাদের সামনে। মুরাদ হোসেন নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, 'রোদ গরমে দুপুর থেকে রাস্তার পিচ গলতে শুরু করে। দুপুর গড়ানোর পর রাস্তার পিচ যেন কাদায় পরিণত হয়। ফলে রিকশার চাকা রাস্তায় আটকে যায়। এতে তাদের অ্যাক্সিডেন্টের ঝুঁকি বাড়ে, তেমনি রাস্তাও এবড়ো থেবড়ো হয়ে যাচ্ছে।'

নীরব হোসেন নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, 'যশোর-নড়াইল মহাসড়ক নিম্নমানের সামগ্রী নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। যেভাবে নির্মাণ করছে, এতে ভোগান্তি বেড়েছে। সড়কে হেঁটে চললে জুতা পিচের সঙ্গে আটকে যাচ্ছে। এর দায় হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের।'

আব্দুলস্নাহ আল মামুন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, 'সরকার সড়কের জন্যও সঠিক বরাদ্দ দিয়েছে। কিছু ঠিকাদার ও সরকারি কর্তকর্তাদের অনিয়ম দায়সারা কাজের জন্য সরকারের বদনাম হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'এই রোদে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। হেঁটে গেলে জুতার সোল আটকে যাচ্ছে। আমার বাইকের দুটো টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে এই সড়কে। এত নিম্নমানের কাজ করেছে, যে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে এসব সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।'

সূত্র জানিয়েছে, তারা সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করেন তা ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে এই পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।

সওজ সংশ্লিষ্ট সূত্র পিচ গলার কারণ হিসেবে বলেছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে অনুভূতির পরিমাণ আরও কয়েক ডিগ্রি বেশি হয়। সড়কের পিচের ওপরে এই তাপমাত্রা আরও প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে। আর কালো হওয়ায় এই পিচ সূর্যের তাপও শোষণ করে বেশি। এছাড়া সড়কে চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পিচ গলে যেতে পারে। তবে এর বাইরে সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, 'যশোর-নড়াইল সড়কের যেসব স্থানে বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে; গরমে সেখানে বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এজন্য গলে যাওয়া স্থানগুলোতে বালি ও নুড়িপাথর দেওয়া হচ্ছে; যাতে গলে যাওয়া পিচ আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সড়কে নিম্নমানের কোনো সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, দুদক তদন্ত করছে। অনিয়ম হলে তাদের তদন্তে জানা যাবে।'