কৃষক ও স্কুলছাত্র হত্যায় ২৬ জনের যাবজ্জীবন
প্রকাশ | ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
জয়পুরহাট ও গাজীপুর প্রতিনিধি
জয়পুরহাটে কৃষক হত্যা মামলায় ১৯ জনের ও গাজীপুরে অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে এক স্কুলছাত্রকে হত্যার দায়ে ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হরন্দা গ্রামের কৃষক আ. রহমান হত্যা মামলায় প্রায় ২২ বছর পর ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে জয়পুরহাট জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌশলী অ্যাডভেকেট নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২ জন পলাতক এবং বাকি ১৭ জন কারাগারে আছেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- পাঁচবিবি উপজেলার হরেনদা গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে আলম, আব্দুস সাত্তারের ছেলে দোলা, ওসমান, কোরমান, আব্দুল গফুরের ছেলে আজাদুল, খলিল আকন্দের ছেলে লাবু, বাবু, আমিনুর, বিরাজ উদ্দিনের ছেলে ফারাজ মন্ডল, সুন্নত আলীর ছেলে শুকটু, মৃত নায়েব আলীর ছেলে উকিল, ভরসা আকন্দের ছেলে দুলাল, আলতাফ আলীর ছেলে আলিম, নজরুল, আব্দুল গফুরের ছেলে সাইদুল, ভরসা আকন্দের ছেলে সানোয়ার, আব্দুস সাত্তার প্রধানের ছেলে সাইফুল, কফিল উদ্দিনের ছেলে কালাম এবং সোলেমান আকন্দের ছেলে জহুরুল।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০২ সালের ২২ নভেম্বর রাতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হরেন্দা গ্রামের সামছদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমানকে পূর্ব শত্রম্নতার জেরে ধানক্ষেত থেকে আলম নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ধরে নিয়ে যান প্রতিপক্ষের লোকজন। এরপর সেখানে আটকে রেখে তাকে নির্মমভাবে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন তারা। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আব্দুল বারিক মুন্সী বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সোমবার এ রায় দেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল ও উদয় সিংহ। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, শাহজালাল সিদ্দিকী ও সোহেলী পারভীন সাথী।
গাজীপুরে ৭ জনকে যাবজ্জীবন
এদিকে, গাজীপুরে অপহরণের পর এক লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে মো. সোহেল নামে এক স্কুলছাত্রকে হত্যার দায়ে সাতজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. বাহাউদ্দিন কাজী এ রায় দেন।
রায়ে প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সেলিম (২২), আব্দুলস্নাহ আলম মামুন (১৯), শাহ আলম (২৯), মো. রিপন মিয়া (৩০), মো. মিলন খন্দকার (২৪), মো. তানজিল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (২২)।
রায় ঘোষণাকালে আব্দুলস্নাহ আল মামুন, সেলিম, রিপন খন্দকার ও মো. তানজিল আদালতে উপস্থিত ছিল। শাহ আলম ও মিলন খন্দকার জামিন নিয়ে পলাতক এবং শফিকুল ইসলাম মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।
গাজীপুর আদালতের এপিপি মাহবুব আলম মামুন মামলার বরাত দিয়ে জানান, ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সোহেল পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর সে আর ফিরে আসেনি। পরদিন সোহেলের বাবার কাছে মোবাইলে অজ্ঞাত ব্যক্তি এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ১০ ডিসেম্বর সকালে জয়দেবপুর থানার লুটিয়ারচালা গ্রামের গজারি বন থেকে সোহেলের লাশ উদ্ধার করে জয়দেবপুর থানার পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ফজলুল হক বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মোহাম্মদ হাসান তদন্তের পর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ওই সাতজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন। এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আদালত এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি মাহবুব আলম মামুন। আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট লাবিব সিদ্দিকী।