উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

কেরানীগঞ্জে নির্বাচন হচ্ছে আ'লীগ বনাম আ'লীগ

প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ঢাকার কেরানীগঞ্জে যারা বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের। মূলত এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। তবে আগে থেকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে সরে এসে সরকার পতনের আন্দোলনে নেমেছে। তাই এবারও উপজেলা নির্বাচনে মাঠে নেই বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও দুইজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সবাই স্থানীয় ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি চতুর্থবারের মতো কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। চেয়ারম্যান পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বিপস্নব। তিনি কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি বোমা হামলায় আহত হোন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মনির হোসেন (তালা)। এ ছাড়াও শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন লিটন (মাইক প্রতীক)। এই পদে আরও নির্বাচন করছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন (টিউবওয়েল)। এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও শেষমেষ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ঢাকা জেলা গণফোরামের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আসমা আক্তার (কলস)। এই পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন মডেল থানা যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি শান্তি আক্তার (সেলাই মেশিন)। এ দিকে নির্বাচন ঘিরে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় দুই প্যানেলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। ঢাকা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি ও ঢাকা-৩ বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দুটি প্যানেলকে আলাদা আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ভোটের প্রচার-প্রচারণা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গ্রামগঞ্জ, হাট, জনপদ ভোটার প্রার্থীর পদচারণায় মুখর। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে চান ভোটাররা। এদিকে শেষ মুহূর্তেও ভোটারের দ্বারে দ্বারে নানা প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। সুষ্ঠু ভোট হলে নির্বাচিত হওয়ার আশা সব প্রার্থীরই। আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, কেরানীগঞ্জে তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে আমার চেয়ারম্যান থাকাকালীন উন্নয়ন হয়নি। উপজেলার জনসাধারণ আমাকে চায়। তাদের সুখ-দুঃখে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও পাশে থাকতে চাই এবং আমি আশা করি, কেরানীগঞ্জের জনগণ আমাকে পুনরায় বিপুল ভোট জয়যুক্ত করবে। কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপস্নব বলেন, আমার নির্বাচনে আসার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পরিবর্তন। পরিবর্তন হবে সব জায়গায়- সেটা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত ইত্যাদি। আমি পরিবর্তন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। সার্বিক বিষয়ে ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রভাব খাটানোর কোনো তথ্য-প্রমাণ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংসদ সদস্যরা এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন এবং ভোট দিতে পারবেন, কিন্তু নির্বাচনী কোনো প্রচার-প্রচারণা করতে পারবেন না। মন্ত্রী-এমপিদের জনসভায় একই মঞ্চে উপজেলা নির্বাচনের কোনো প্রার্থী উপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, কেরানীগঞ্জে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। নির্বাচনের আচরণবিধি-সংক্রান্ত সব বিষয় প্রার্থীদের অবহিত করা হয়েছে।