ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জোড়া মাথা আলাদায় অস্ত্রোপচার শেষে শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া সুস্থ আছে। রোববার সিএমএইচে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সম্প্রতি তাদের অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পর্যবেক্ষণে সিএমএইচে আসেন হাঙ্গেরির চিকিৎসক দল এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এই চিকিৎসক দল চলমান চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এ ছাড়াও ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিরল মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়ার অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ফলোআপের জন্য বিদেশি চিকিৎসক দল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আসেন।
বক্তারা বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায়, জোড়া মাথার শিশুদের বলা হয় 'ঈৎধহরড়ঢ়ধমঁং ঞরিহং'। মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিকলতা। ২৫ লাখ জীবিত জমজ শিশুর মধ্যে মাত্র একটি জোড়া মাথার শিশু জন্ম নেয়। প্রায় ৪০ শতাংশ জোড়া মাথার শিশু মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং আরও এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃতু্যবরণ করে। আনুমানিক শতকরা ২৫ ভাগ শিশু জোড়া মাথা নিয়ে বেঁচে থাকে, যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এর সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মাথা জোড়া লাগানো জমজ সন্তান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই বিরল অস্ত্রোপচারটি প্রথমবারের মতো গত ১ আগস্ট ৩৩ ঘণ্টাব্যাপী ঢাকার সিএমএইচে সম্পন্ন হয়, যা বিশ্বে ১৭তম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অস্ত্রোপচারের সবচেতে জটিল অংশ 'জমজ মস্তিষ্ক' আলাদাকরণের কাজটি সম্পন্নের জন্য ২০১৯ সালের ২২ জুলাই রাবেয়া ও রোকেয়াকে সিএমএইচে আনা হয়। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রম্নয়ারি এবং ১৩ মার্চ দুই ঘণ্টা ৩০ মিনিট ব্যাপী দুটি অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এই অস্ত্রোপচার দুটির মাধ্যমে তাদের মাথায় বিদ্যমান ক্ষতস্থান নতুন কোষ দ্বারা পূর্ণ করা হয়। ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারির শেষ দিকে রাবেয়ার মাথার বাম দিকের চামড়ার ক্ষত শুরু হয় এবং পরে বৃদ্ধি পেয়ে চামড়ার নিচে লাগানো কৃত্রিম মাথার খুলি দৃশ্যমান হয়।
এই জটিলতা সমাধানে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ২০২২ সালের ৭ মার্চ 'ঈৎধহরড়ঢ়ষধংঃু ঝঁৎমবৎু্থ এর মাধ্যমে সিএমএইচে সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। বর্তমানে রোকেয়া ও রাবেয়া দুইজনই সুস্থ আছে। ওই অস্ত্রোপচারে দেশি ও বিদেশিসহ শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।